সাংবাদিক সনেটকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো পুঠিয়া থানার এসআই পারভেজকে শাস্তি।।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে নানা অপকর্মের হোতা রাজশাহীর পুঠিয়া থানার এসআই তৌফিক পারভেজের বিরুদ্ধে। তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে তিন মাসের জন্য জঙ্গল প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তর। গতকাল সোমবার তিনি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পুঠিয়া থানার ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘‘এস আই তৈৗফিক পারভেজকে রাঙ্গামাটিতে জঙ্গল প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তার কাছে এসেছে। আজ মঙ্গলবার তিনি রাঙ্গামাটিতে পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করবেন।’’ জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, এসআই তৌফিক পারভেজকে জঙ্গল প্রশিক্ষণের জন্য রাঙ্গামাটি পুলিশ প্রশিক্ষন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।

তবে প্রশিক্ষণ কালিন তিনি পুঠিয়া থানায় সংযুক্ত থাকবেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে ফেরার পর তাকে কোথায় বদলি করবে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি। এদিকে, রাজশাহী জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুঠিয়া থানার এসআই তৌফিক পারভেজকে শাস্তিমূলক জঙ্গল প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে গেছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পুঠিয়া থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভালভাল পরিবারের সন্তানদের ধরে নিয়ে এসে মোটা অংকের অর্থ দাবি করতো এসআই তৌফিক পারভেজ। টাকা না দিলে পকেটে মাদক দ্রব্য দিয়ে অথবা মাদক সেবনকারি হিসেবে চালান দিয়ে দিতো। বিশেষ করে বাইরে থেকে আসা বা পুঠিয়ার পত্নত্ব দেখা আসা লোকজনকে বেশী টার্গেট করতো তিনি। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষতো দুরের কথা থানা পুলিশের সদস্যরাই অতিষ্ঠ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

পুলিশের একধিক সূত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি রাজশাহী শহর থেকে দুই তরুণ-তরুণী বেড়াতে গিয়েছিলেন পুঠিয়ায় বানেশ^র এলাকায় মহাসড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে চান পান করেন তারা। এর পর তারা দুইজনে ধুমপান করেন। ধুমপান করার অপরাধে তাদের দুজনকে ধরে নিয়ে যায় এসআই তৌফিক পারভেজ। পরে তিনি ওই তরুণ-তরুণীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বিকাশে পাঠাতে বলে। সে টাকা না দিয়ে রাতভর ওই তরুণ-তরুণীকে থানা হাজতে রেখে দেয়। তবে পরের দিন সকালে তরুণীকে ছেড়ে দেয়া হলেও মাদক সেবনের মামলায় ওই তরুণকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয় এসআই পারভেজ।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি বিকেলে নাটোর থেকে পুঠিয়া বেড়াতে আসেন স্থানীয় একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকসহ চারজন। তল্লাশী ও জিজ্ঞাবাসাদের নামে এসআই পারভেজ তাদের ধরে নিয়ে যায় একটি নির্জন এলাকার একটি বাগানে। সেখানে গাছের ডাল দিয়ে তাদের বেধরক পেটায় এসআই পারভেজ। এর পর মাথায় অস্ত্র ধরে ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে পকেটে ইয়াবা দিয়ে তাদের চালান দেয়ার হুমকি দেয় এসআই তৌফিক পারভেজ।

পরে বিকাশের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় এই পুলিশ কর্মকর্তা। এসআই তৌফিক পারভেজের ভয়কর এই ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ করেন রায়হানুল ইসলাম রানা নামের ভূক্তভোগি এক যুবক। অভিযোগে এসআই পারভেজের ভয়কর আচরণের বিবরণ দেয়া হয়। যাতে বলা হয়, পুঠিয়ার থেকে একটি দুরে হঠাৎ করেই ০৩টি মোটরসাইকেল এসে চারদিক থেকে ঘিড়ে নিয়ে বলে তাদের সঙ্গে যেতে হবে। আমরা প্রশ্ন করি কেন এবং কি কারণে। আমাদের সাথে আইডি কার্ড দেখাই, তারপরে তারা বলে আমাদের থানার সেকেন্ড অফিসার পারভেজ আপনাদের সাথে কথা বলবে। আমরা বলি কেন তিনি আমাদের সাথে কথা বলবে, সেখানে থাকা আরেক পুলিশ অফিসার মোতালেব ও এসআই পারভেজের দালাল টিটু ও হেলমেটধারী আরও ৩/৪ জন আমাদের উপড় চড়াও হয়।

এক পর্যায়ে আমরা বাধ্য হই তাদের সাথে যেতে। তারা আমাদের সেই গ্রামের এক বিলের নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখান থেকে ৩০ মিনিট পর তারা আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে সামনের দিকে নিয়ে যায়। সেটাও ছিল একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন নির্জন জায়গা। সেখানে এসআই পারভেজ আসেন এবং কোন কথা বা জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই গাছের ডাল ভেঙ্গে এলোপাথারী মারপিট করে। তারপর আবার আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়, আরও সামনে নির্জন অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্যানেলের ধারে।

সেখানে হাতকড়া পড়িয়ে এসআই পারভেজ অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে এই মুহুর্তে ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। না হলে তোদের মেরে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলবো এবং পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে কোর্টে চালান দেব। কেন বা কি অপরাধ জানতে চাইলে সে বলে তোরা ফেনসিডিল সেবন করেছিস। আমরা কোন মাদক সেবন করিনি বলি। আমাদের রক্ত পরীক্ষা করতে বলি। কিন্তু পারভেজ বলে, রক্ত পরীক্ষা করা লাগবেনা এমনিতেই ঐ রিপোট আমি ডাক্তারদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছি।

এর পর এসআই পারভেজ আমাদের পাঁচজনের নাম পরিচয় লিখে নেয়। কোনো উপায় না পেয়ে আমরা সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য বিশ হাজার টাকা দিতে চাই। তবু এই মুহুর্তে নাই, বাসায় ফোন দিয়ে বিকাশ করে নিতে হবে। তাতে তারা রাজি হয় না এবং আমাদের ওপর আবারও অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে এসআই পারভেজ। তারপর আমরা ৪০ হাজার টাকা দিতে রাজি হই। সেটাতেও রাজি হয়নি এসআই পারভেজ। তাদের মধ্যে পুলিশ অফিসার মোতালেব বলে এতো অল্পে আমরা ওসিকে ম্যানেজ করতে পারবো না, আর একটু বাড়াও।

অন্যথায় তোদের মেরে ক্যানেলে ফেলে দিবে বলে হুমকি দেয়। এর পর তাদের একটি আম বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা কোন উপায় না পেয়ে সবশেষে ৬৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হলে তারা আমাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে। টাকার দফারফা হওয়ার পর এসআই পারভেজ চলে যায়। আমাদের পাঁচজনের হাত বাঁধা অবস্থায় সেখানে থাকে পুলিশ অফিসার মোতালেব ও টিটু দালাল।

তারা একটি বিকাশ এজেন্ট +৮৮০১৭৬০৫৫৯২৯২ নাম্বার দেয়। আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে টাকা টাকা পাঠায়।…৮৭ (শেষ দুই ডিজিট) নাম্বার থেকে ১০,০০০/=, …৩৬ (শেষ দুই ডিজিট) নাম্বার থেকে ১০,০০০/=,… ৭৭ (শেষ দুই ডিজিট) এই নাম্বার থেকে ১০,০০০/=,…২১ (শেষ দুই ডিজিট)।#

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান শুভ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.