সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে রংপুরের এক গণমাধ্যম কর্মীর “খোলা চিঠি”

                   ।।। কুড়িগ্রামের শ্রদ্ধেয় ডিসি মহোদয় প্লিজ সাংবাদিক রিগ্যানের জামিনের ব্যবস্থা করুণ।।।
 শ্রদ্ধেয় কুড়িগ্রামের ডিসি মহোদয়।
 
আসসালামু আলাইকুম। 
আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনাকে অত্যন্ত কর্মঠ, দক্ষ এবং সজ্জন প্রশাসক হিসেবে জানি। আপনার স্বামীকেও আমরা চিনি ও জানি। তিনিও নির্লোভ সরকারী কর্মকর্তা ও সজ্জন মানুষ। আমরা নিকট অতীতেই দেখলাম, কুড়িগ্রামের মানুষ আপনাকে সেকারণেই বদলি হওয়া সত্তেও আবারও আপনার বদলি ঠেকিয়েছিলেন। একজন সরকারী কর্মকর্তাকে গণমানুষ আন্দোলন করে বদলী ঠেকায় সেটার নজির মনে হয় এ পর্যন্ত শুধু আপনার ক্ষেত্রেই। যার নেপথ্যে এবং প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীরা। এই গণমাধ্যম কর্মীরাই কুড়িগ্রামের গণমানুষকে একাট্রা করে আপনাকে আবারও কুড়িগ্রামেই রেখেছেন।
 শ্রদ্ধেয় ডিসি মহোদয়।।
একজন ডেপুটি কমিশনার হিসেবে আপনার বিভিন্ন কর্মকান্ড কুড়িগ্রামের গণমাধ্যমকর্মীরা পৃন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশ করে আপনাকে যথার্থ মর্যাদা দিয়ে আপনাকে আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা দিয়েছেন। অবশ্য আপনি সাধুবাদ পাওয়ার কর্ম করেছেন বলেই গণমাধ্যম কর্মীরা তা করেছেন। সেই কাতারে আমার সহকর্মী বাংলাট্রিবিউনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম রিগ্যানও ছিলেন। এর বাইরে রিগ্যান যে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন সেটিও রিগ্যান আপনাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করেন-ভালোবাসেন বলেই তার অনুসন্ধানে আপনার দৃষ্টিগোচরে এনেছিলেন। যা একটু অন্যভাবে ভাবলে পজেটিভ। রিগ্যান আপনাকে পরিশুদ্ধ শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন, তেলামি করেন না বলেই অসঙগতি ধরিয়ে দিয়ে আপনাকে হয়তো শুদ্ধতার বারতা দিতে চেয়েছিলেন। এটাই প্রকৃত ভালোবাসা-শ্রদ্ধা। এটার মধ্যে কোন ভাঁড়ামি নেই। স্বার্থ নেই। অন্ধতা নেই। চামচামিপনা নেই। তেলামি নেই। এটাকে যদি অপরাধ ভাবেন- কতুটুক ঠিক হবে, তা সময় নিষ্ঠুরভাবে জবাব দেবে। রিগ্যান কেন অন্ধকার কারাগারে। তাঁকে কেন একবছরের কারাদন্ড দেয়া হলো। যে অপরাধের কথা বলা হলো-সেই কথিত অপরাধের সত্যতা নিরুপণের কোন অবকাশ দেয়াও হলো না।
শ্রদ্ধাবরেষূ ডিসি মহোদয়।।
রিগ্যান কি অপরাধ করেছে, কতটুকু অপরাধ করেছে, আদৌ অপরাধ করেছে কিনা, সেটি একজন বিবেকবান প্রশাসক এবং মমতাময়ি মা হিসেবে অবশ্যই আপনার জানা আছে। রিগ্যানকে যে প্রক্রিয়ায় অসম্মান করে, যেভাবে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে তার সাথে যা করা হয়েছে, যেভাবে গভীর রাতে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গভীর রাতে তাকে নিয়ে না এসে, আনলেও অন্তত: সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে মোবাইল কোর্ট করা যেতো কিনা, এর আগেও একইভাবে গভীর রাতে কাউকে এমনভাবে সাজা দেয়া হয়েছে কিনা, নাকি অতি উৎসাহী কোন পক্ষ আপনার প্রমাণিত সুনামকে ‘আহত’ করতেই এই ধরণের উদ্যোগ নিলো কিনা-এসব বিষয় আপনার জানা আছে কিনা-জানা না থাকলে আপনি যত দ্রুত সম্ভব তা জেনে নিন। আর হ্যাঁ রিগ্যান যদি ভুল হন, তাহলে বিধি অনুযায়ী রিগ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হতে পারে। সংবিধান তাকে যে মর্যাদা দিয়েছে, সেটি অক্ষুন্ন রেখেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হতে পারতো। কিন্তু যা হলো সেটি মানবিক মুল্যবোধের সমাজ কিংবা প্রশাসনে করা যায় কিনা সেটাও ভাবতে হবে আপনাকে। রিগ্যান আপনার সন্তান তুল্য। সব বিবেচনায় নিয়ে ন্যায় বিচারক হিসেবে আপনি একজন মা হিসেবে রিগ্যানের জামিনের ব্যবস্থা করুন।
শ্রদ্ধেয় ডিসি মহোদয়।। 
বাংলাট্রিবিউনের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি, বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষসহ সকল গণমাধ্যম হাউজ বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় হিসেবে নিয়েছে। আর আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা তো নিন্দা ক্ষোভের বারুদে জ্বলছি। তাই  আপনি বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখুন। দ্রুত মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করুন। একজন ন্যয় বিচারক প্রশাসক এবং মা হিসেবে আপনি রিগ্যানের ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। নইলে সময় যত চলে যাবে। বিষয়টির পাখনা ততই উড়বে। ইতোমধ্যে উড়ানো শুরুও করেছে। বিশ্ববাসির কাছে রিগ্যানের ঘটনাটি এখন ব্রেকিং নিউজের চাঙকে। এই ঘটনা আরও বাড়ুক আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা সেটা চাই না। এর জন্য যা প্রয়োজন তা হলো আপনার হস্তক্ষেপে মামলা রিগ্যানের কি বোর্ডে ফিরে আসা ও মামলা প্রত্যাহার করা।
শ্রদ্ধেয় ডিসি মহোদয়।।
আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা চাই- যা ঘটেছে সেটার আর পাখনা না মেলুক। এ ধরণের ঘটনা যেন এটাই প্রথম এবং শেষ হয়। যতদ্রুত সম্ভব রিগ্যানকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি এই অমানবিক কাজটির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ দৃশ্যমান আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। নিতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তাহলেই কেবল সেই পর্যন্ত যা চলে যাবে- তা ফিরিয়ে আসতে পারে।
শ্রদ্ধেয় ডিসি মহোদয়।। 
আবারও অনুরোধ করছি রিগ্যানকে কারাগার থেকে নিয়ে আসুন আমাদের কাছে। ওনার মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে। কুড়িগ্রামবাসির কাছে। বাংলাদেশের কাছে।
বিনয়াবত
সরকার মাজহারুল মান্নান
সামান্য গণমাধ্যমকর্মী
রংপুর।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.