সাংবাদিক থেকে রানি বনে যাওয়া এক নারীর গল্প

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্পেনের রাজপরিবারের ঐতিহ্য ভেঙে রানি হয়েছেন লেতিসিয়া অরতিজ রোকাসোলানো। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি এখন দেশটির রানি। প্রায় চার দশক ধরে স্পেনের রাজা ছিলেন হুয়ান কার্লোস। ২০১৪ সালে ছেলে ষষ্ঠ ফিলিপের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে তাঁর স্ত্রী একসময়ের ডাকসাইটে সাংবাদিক লেতিসিয়া রানির আসনে বসেন।
১৯৭২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্পেনের উত্তরাঞ্চলে সাংবাদিক পরিবারে জন্ম লেতিসিয়ার। তাঁরা বাবা হোসে অরতিজ আলভারেজ পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। মা মারিয়া দে লা পালোমা রোকাসোলানো রদ্রিগেজ ছিলেন রেজিস্টার্ড নার্স ও হাসপাতাল ইউনিয়নের প্রতিনিধি। আর লেতিসিয়ার দাদি ৪০ বছর রেডিও ব্রডকাস্টার ছিলেন।
মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রি করেন লেতিসিয়া। এরপর তিনি ইনস্টিটিউট ফর স্টাডিজ ইন অজিওভিজ্যুয়াল থেকে অডিওভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ শুরু করেন। ‘লা নুয়েভা এস্পানা’ পত্রিকা দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতার শুরু। শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইএফইতে কাজ করার আগপর্যন্ত তিনি স্প্যানিশ সংবাদপত্র এবিসিতে সাংবাদিকতা করেছেন।
লেতিসিয়া মেক্সিকোতে অল্প কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছেন। এরপর তিনি স্পেনে ফিরে এসে ব্লুমবার্গ ও সিএনএনের স্প্যানিশ সংস্করণে কাজ করা শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি স্পেনের সবচেয়ে বেশি দেখা দৈনিক সান্ধ্য সংবাদ অনুষ্ঠান টেলিডিয়ারিও ২-এর টিভি উপস্থাপকের সম্মাননা পান। সাংবাদিকতাজীবনে লেতিসিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর, নাইন–ইলেভেন হামলার পর নিউইয়র্ক থেকে খবর সরাসরি সম্প্রচার ও ইরাক যুদ্ধের বিষয়ে নানা প্রতিবেদন করেছেন।
২০০২ সালে সহকর্মী বন্ধু সাংবাদিক পেড্রো এরকুইসিয়ার আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দেন লেতিসিয়া। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের প্রিন্স ফিলিপও। সেখানেই তাঁদের প্রথম দেখা ও পরিচয়। এই পরিচয় ধীরে ধীরে পরিণয়ে রূপ নেয়। শুরু হয় প্রিন্স ও সাংবাদিক লেতিসিয়ার প্রেমকাহিনি। এরপর ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের কথা ঘোষণা করেন।
এর আগেও লেতিসিয়ার একবার বিয়ে হয়েছিল। ১৯৯৮ সালের আগস্টে আলোনসো গুয়েরো পেরেজ নামের একজন লেখক ও হাইস্কুলের সাহিত্যের শিক্ষকের সঙ্গে তিনি গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন। ১০ বছর সংসার করার পর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
২০০৪ সালের ২২ মে  মাদ্রিদের ক্যাথেড্রাল দে সান্তা মারিয়া লা রিয়াল দে লা আলমুদেনায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্স ফিলিপ ও লেতিসিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর থেকে একজন সাধারণ সাংবাদিক থেকে লেতিসিয়া হয়ে যান প্রিন্সেস অব অস্ট্রিয়াস। বিয়ের দিন লেতিসিয়া স্প্যানিশ ফ্যাশন ডিজাইনার ম্যানুয়েল পারতেগাজের নকশা করা বিয়ের সাদা গাউন পরেছিলেন। আর অফহোয়াইট সিল্ক টুলে দিয়ে তৈরি ঘোমটা উপহার দিয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর নববধূ লেতিসিয়ার কপালে চুম্বন দিয়েছিলেন ফিলিপ।
এরপর থেকে লেতিসিয়ার জীবন বদলে যেতে শুরু করে। সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজপরিবারের কাজে মন দেন তিনি। একসময় যিনি খবরের পেছনে ছুটে বেড়াতেন, বিয়ের পর থেকে সামান্য কিছুর জন্যও খবরের শিরোনাম হতেন তিনি। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর প্রিন্স ফিলিপ ও প্রিন্সেস অব অস্ট্রিয়াস লেতিসিয়ার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এই কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয় লিওনর। এরপর ২০০৭ সালের ২৯ এপ্রিল ইনফান্তা সোফিয়া নামে তাঁদের দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়।
প্রায় চার দশক ধরে স্পেনের রাজা থাকা হুয়ান কার্লোস ২০১৪ সালে সিংহাসন ত্যাগ করে ছেলে ফিলিপের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর ফিলিপ রাজা ও লেতিসিয়া রানির আসনে বসেন। রানির আসনে বসে ইতিহাস সৃষ্টি করেন লেতিসিয়া। কারণ, ১৮৭৮ সালের পর তিনিই প্রথম সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া স্প্যানিশ রানি।
সাংবাদিকতা করার সময় লেতিসিয়া শিশুদের অধিকার, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মতো সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কাজ করেছিলেন। রানি হয়েও তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এসব কাজ করে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন কনসর্ট ক্যামিলার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হতে যাচ্ছে ৬ মে শনিবার। এতে দুই হাজারের মতো অতিথি উপস্থিত থাকছেন। স্পেনের রাজা ফিলিপ ও রানি লেতিসিয়াও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন। তাঁদের সঙ্গে ইউরোপের অন্য রাজপরিবারগুলোর মধ্যে মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট ও প্রিন্সেস শার্লিন, ডেনমার্কের যুবরাজ ফ্রেদেরিক ও ক্রাউন প্রিন্সেস মেরি এবং সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফ ও ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া অব সুইডেন যোগ দেবেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.