নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ শহর সাঁওতাল পল্লীর একটি ঐতিহাসিক পুকুর অবৈধভাবে ভরাট করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রাতের আঁধারে ভেকু ও ট্রাক্টার ব্যবহার করে পুকুর ভরাটের ঘটনায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ট্রাক্টারে করে ফসলি জমির উর্বরা উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে এনে পুকুরে ফেলা হচ্ছে। ভেকু ও ট্রাক্টারের বিকট শব্দে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে পুরো পাড়ার মানুষের। পুকুরটি ছিল গোসল, কাপড় ধোয়া ও গবাদিপশুর পানির একমাত্র উৎস।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী মাটিদস্যু চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিয়ে এই জলাশয় ভরাট করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা জানান, রাতে পুকুর পাড়ে দেশীয় অস্ত্রধারী বহিরাগতদের পাহারা বসানো হয়, যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, পুকুরটি কিনেছেন সদর উপজেলার বটতলা হাট এলাকার ধনঞ্জয়ের ছেলে শুকচান। ভরাটের কাজ করছেন একই উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার এলাকার মৃত রবুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম।
সাঁওতাল পল্লীর প্রবীণ এক বাসিন্দা বিটিসি নিউজকে বলেন, এই পুকুর আমাদের বাপ-দাদার আমলের। এটি শুধু পানির উৎস নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনের অংশ। এখন জোর করে ভরাট করা হচ্ছে, প্রতিবাদ করলেই ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা পরশ বিটিসি নিউজকে বলেন, পুকুরটি ভরাট হলে আমাদের জনজীবনে অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
পরিবেশবাদীরা জানান, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সংশোধিত) অনুযায়ী জলাশয় ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে জলাবদ্ধতা, পানির সংকট ও অগ্নিকান্ডের মতো ঝুঁকি বাড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর এক দায়িত্বশীল প্রতিনিধি বিটিসি নিউজকে বলেন, মুক্ত জলাশয় উদ্ধার করা না গেলে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটবে। দ্রæত অবৈধভাবে ফেলা মাটি অপসারণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভরাটকাজের দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, পুকুর ভরাট বা ফসলি জমির মাটি কাটার কোনো অনুমতি নেননি তিনি।
পুকুরের মালিক শুকচান স্বীকার করেন, ভরাটের অনুমতি এখনো নেওয়া হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বিটিসি নিউজকে জানান, পুকুর ভরাটের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অবৈধ ভরাট কাজ বন্ধ করা হবে।
প্রয়োজনে রাত ও দিনে জমির কাগজপত্র যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাঁওতাল পল্লীর সাধারণ মানুষ ভৃমিদস্যুদের হাত থেকে তাদের শেষ সম্বল এই ঐতিহাসিক পুকুর রক্ষায় উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #















