সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মিলেনি, বাগমারায় পানির দামে আলু বিক্রি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাগমারা ও তার পার্শ্ববর্তি এলাকার আলুচাষিরা চলতি মওসুমের আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকায় হাজার হাজার টন আলু ক্রেতা না থাকায় পানির দামে বিক্রি হচ্ছে।
নাম মাত্র ২২টাকা কেজি দাম বেঁধে নিয়ে কৃষকরা বিব্রত। আলুর ন্যায্য মূল্যে কৃষক যখন দিশেহার ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার কৃষকদের আশ্বাস দেন ২২ টাকা দরে আলু ক্রয় করা হবে।
সরকারী ঘোষণার প্রায় এক মাসেও মিলেন বেধেঁ দেয়ার কোন কার্যক্রম। আলু বিক্রয়ের সময় শেষ মুহূর্তে আলু বিক্রি করতে না পেরে স্টোরজাত আলু এখন কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িছে।
জানা যায়, বাগমারা এলাকায় আলু চাষের উপযোগী মাটি। উর্ব্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় এবারে প্রচুর পরিমানে আলু চাষ হয়। গত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে বেশী লাভের আশায় এবারে অধিক হারে আলু চাষে কৃষকরা ঝুঁকে। কিন্তু সে আশা গুড়ে বালি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বছর উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষে আলু চাষ হয়েছে। প্রতিবারে মওসুমে আলু বিক্রির পর অতিরিক্ত লাভের আশায় আলু কৃষকরা স্টোরজাত করে।
বালানগর গ্রমের কৃষক জিল্লুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, গত মওসুমে ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রথমে দাম না পেলেও পরে স্টোরজাত আলুতে বেশ পুষিয়ে ছিল। এবারে অধিক লাভের আশায় ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে মহা বিপাকে পড়েছেন তিনি। বাজারে আলুর দাম খুবই কম। স্টোরে বাইরের কোন ক্রেতা নেই।
স্থানীয় বাজারের দোকানীরা দুই/চার বস্তা ক্রয় করতে আসলেও দাম দিতে চাইছে না। ক্রেতাদের দাবি বড়ির আলু বাজারে ব্যাপক আমদানি। তাই বাজারের আলু অতিরিক্ত চাপ নিতে তারা পারছেন না। এতে লাভের আশা তো দুরের কথা চাষের খরচ জুটছেনা।
বালানগর গ্রামের হাফিজুর রহমান, গোপালপুর গ্রামের মীর বক্স, দেউলিযা গ্রামের আঃ রাজ্জাক, নন্দনপুর গ্রামের আঃ রহিমসহ এলাকার কয়েক জন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ায় এবারে প্রচুর পরিমানে আলুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে চাষে ব্যয় হয়েছে অনেক।
বাজার কম মূল্যে বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাপক লোকশান হচ্ছে। আলু জমা থাকায় পুনরায় আলুচাষের সময় ঘুনিয়ে আসছে। এ কারণে আলু পানির দামে বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছে।
কৃষকরা বিটিসি নিউজকে জানান, বর্তমানে এলাকায় ১২/১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি। ১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এতে ৮০/৮৫ মন ফলন হলেও দাম কমে লোকশান গুণতে হচ্ছে। ১ বস্তা (৬০ কেজি) আলু ৫০০/- থেকে ৫৫০/- টাকা দরে বিক্রি চলছে।
অথচ প্রতি কেজিতে উৎপাদন কৃষকের ১৭ টাকা খরচ হয়েছে। এর সঙ্গে হিমাগারে প্রতি বস্তা (৬০ কেজি) ভাড়া ৪০৫/-টাকা। আলু সংরক্ষণ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর কেজিতে খরচ প্রায় ২৫ টাকা দাঁড়ায়। প্রতি কেজি বিক্রি ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকায়।
এতে লোকশান গুণতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা। এতে করে কৃষকের স্টোরজাত আলু শেষ পর্যন্ত ভাগায়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অভিজ্ঞমহলের মতে, সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে বেশি দামে কিনে বাইরের দেশে বিক্রির ব্যবস্থা নিলে কিছুটা সমস্যা দুর হতে পারে। কিন্তু সেই সময় হবে কি না এ নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যথা।
একই ভাবে স্থানীয় কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা আলুর দুরাবস্থাকে সরকারী ব্যবস্থাপনাকে দোষছেন। বাজার ব্যবস্থায় বেঁধে দেয়ার পর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকার কৃষকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মো: আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.