সরকারী নীতিমালা উপেক্ষা করে সাব লীজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কর্ণখালী খাড়ির পানি সেচে অবৈধভাবে মাছ শিকার ॥ ধ্বংস পোনা মাছ ও জলজ প্রাণী


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর ব্রীজ সংলগ্ন কানসাট-কর্ণখালী খালে (ক্যানেল) সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে খালের পানি সেচে মাছ শিকার, ছোট পোনা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংস এবং পরিবেশ দূষিত করার অভিযোগ উঠেছে।

একটি প্রভাবশালী মহল মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও পেশীশক্তি দেখিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই এই খালের পানি পুরোটাই সেচে ফেলে মাছ ধরে আসছে বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ। নিয়ম না থাকলেও দেয়া হচ্ছে সাব লিজের পর সাব লিজও।

গতকাল বৃহষ্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়-মির্জাপুর-কর্ণখালী বিলের অদূরে কানসাট-কর্ণখালী খালে ৪-৫টি শ্যালো মেশিনে পানি উঠিয়ে ওই এলাকার আমবাগানসহ পার্শ্ববর্তী জমিতে ফেলা হচ্ছে। এতে আম বাগান ও মাঠের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারী নীতিমালায় সাব লিজ দেয়া বা নেয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের সাবের আলীর লিজ নেয়া খাড়ি একের পর একের কাছে (প্রায় ৩ জন) সাব লিজ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ লিজ নেয় ইব্রাহিম ও সেলিম। খাল সাব লিজ নিয়ে পানি সেচে মাছ ধরার কথা স্বীকারও করেছেন ইব্রাহিম ও সেলিম।

কার কাছ থেকে লিজ নিয়ে পানি সেচে ফেলে মাছ ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে বিলভাতিয়া-কর্ণখালী বিলের লিজ নেন গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের সাবের আলী। তার কাজ থেকে সাব লিজ নেয় শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ বালিয়াদিঘি গ্রামের আবদুস সালাম। আব্দুস সালামের কাছ থেকে তৃতীয় লিজ নিয়ে মাছ শিকার করছে ইব্রাহিম ও সেলিমসহ বেশ কয়েকজন। ইব্রাহিম জানায়, মোট ৬ বছরের জন্য কানসাট-কর্ণখালী খাল লিজ নিয়ে মাছ শিকার করছি।

এদিকে, পানি সেচে মাছ শিকারের খবর পেয়ে দাইপুখুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েল গ্রাম পুলিশদের পাঠিয়ে পানি সেচ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও কোন কাজ হয়নি।

জলাশয়ের লিজ ও মাছ শিকারের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বরুণ কুমার মন্ডল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, জলাশয়টি মৎস্য বিভাগ থেকে লিজ দেয়া হয়নি।

জলাশয়ের লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জানান, ২০০৯ সালে ২৫ জুন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৭নং শাখা থেকে প্রকাশিত গেজেটের ৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-ইজারাকৃত জলমহলগুলো কোন ক্রমেই সাব লিজ দেয়া যাবেনা। যদি সাব লিজ দেয়া হয়, তাহলে ওই জলমহলের ইজারা জেলা প্রশাসক/উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাতিল করবেন এবং জামানতসহ জমাকৃত ইজারা মূল্য সরকারের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত হবে।

ইজারা গ্রহিতা সমিতি পরবর্তী ৩ বছর কোন জলমহলের ইজারার জন্য বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ২১ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, বন্দোবস্তোকৃত/ইজারাকৃত জলমহলের কোথাও প্রবাহমান প্রকৃতির পানি আটকিয়ে রাখা যাবেনা।

সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরও বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কোন জলমহল/খাল সেচ যন্ত্র দিয়ে পানি সেচে মাছ শিকার করা যাবেনা। সম্পূর্ণ পানি সেচে ফেলা হলে, মাছের পোনাসহ ছোট ছোট মাছ ধ্বংস হয়ে যাবে। পাশাপাশি ওই খালের সমস্ত জলজ প্রাণিও ধ্বংস হবে। পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল আকতার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, জলমহলের ইজারার বিষয়টি ও এর নীতিমালাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা নেই। বিষয়টির জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.