সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরও ভয়াবহ : মির্জা ফখরুল

 

বিএনপি প্রতিবেদকসকল জল্পনা কল্পনা ও পুলিশি বাধা অতিক্রম করে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ ঘিরে দুপুর সাগে ১২টা পর্যন্ত মাঠে প্রবেশে ১৪৪ ধারা জারী ছিল। নেতাকর্মীরা সকাল ১০টার দিক থেকে মাদ্রাসা মাঠে র দিকে আসতে থাকে। এদিকে চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসার সময় পুলিশ বাস আটকিয়ে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেয় বলে স্ব স্ব জেলার নেতারা অভিযোগ করেন। এ সকল বাধা অতিক্রম করে বিএনপি, ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা মাদ্রাসা মাঠে মিছির সহকারে উপস্থিত হন। এ সময়ে মাঠের ভিতর এবং চারিদিকের রাস্তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবী সম্মলিত স্লোগান দিতে দিতে মাঠে প্রবেশ করেন। জুম্মার নামাজের পরে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্চে প্রবেশ করেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক জননেতা মিজানুর রহমান মিনু। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি’র মহাসচিব ও মুখপাত্র জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন আ.স.ম আব্দুর রব-সভাপতি, জাসদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, এলডিপি সভাপতি কর্ণেল অবঃ অলি আহম্মেদ-বীর বিক্রম, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মেদ, গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোঃ মন্টু, নাগরীক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা: জাফর উল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, গণ ফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী,

জে.এস.ডি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেজওয়ান আহম্মেদ, জামিয়াতুল ওলামা ইসলামের নেতা মাওলানা নুর হোসেন কাশেমী।

এছাড়াও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহম্মেদ আব্দুল কাদের, বিকল্প ধারা সভাপতি নুরুল আমিন বেপারী, নাগরীক এক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস.এম আকরাম, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ এর আহবায়ক রিটা রহমান, ঐক্য প্রক্রিয়ার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমিন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা, নাগরীক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শাহজাহান আলী, ব্যারিষ্টার আমিনুল হক, আমান উল্লাহ আমান, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগটনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, দপ্তর সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়ার মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জাতীয়বাদী মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খান, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, রাজশাহী মহানগর গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পেয়ারা, নাগরীক ঐক্যের হাসনাত বেগ ও বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ রাজশাহীর স্থানীয় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের লক্ষাধীক নেতাকর্মী মাঠে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বক্তব্য দীর্ঘ নয়, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। প্রশ্ন বাংলাদেশ স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি পারবে না। কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার ও সংগঠন করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না এখন এটা মৌলিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ঐক্য করেছি, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে মিটিংয়ে বলেছিলেন, আমি হিংসা চাই না, শান্তি চাই। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে বলে দাবী জানান। সেইসাথে খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যজোট নির্বাচনে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নইলে নির্বাচনে যাব না। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। সবশেষে তিনি দেশনেত্রীর মুক্তি , তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহবান জানান। আন্দোলন করেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আ.স.ম আব্দুর রব বলেন, সংলাপে গিয়েছিলাম, দেশ-জাতিকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। বলছি সংঘর্ষে যাবেন না। আমরা নির্বাচনে আসতে চাই, নির্বাচনে আসতে চাই। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, নেতাকর্মীদের মুক্তি দেন। তিনি বলেন, সংলাপে দাবি করেছিলাম, সংসদ বাতিল করেন, আপনি পদত্যাগ করেন। শুনলেন না। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। আমরা যাতে নির্বাচনে যেতে না পারি। দেশের ৯০ শতাংশ ভোটারকে বাদ দিয়ে সাত দফা না মেনে দেশে নির্বাচন হতে পারে না। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন সেটা কি সংবিধানে ছিল। আজকে বলছেন, তফসিল ঘোষণার পরে আন্দোলন বেআইনি। যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন বেআইনি ছিল না। এসব তালবাহানা করে পার পাবেন না। দাবি মানতে হবে। আওয়ামী সলীগের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, তফসিল ঘোষণার পরেও আন্দোলন করেন। তখন বেআইনি হয় না। আমরা করলে বেআইনি হয়ে যায়? কি করবেন জেলে নেবেন। ৬ বছর জেলে ছিলাম, জেল ভয় পাই না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তফসিল না পেছালে নির্বাচন কমিশনে পদযাত্রা হবে।

২০ দলীয় জোটের নেতা ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, নির্বাচন হবে কি না, নির্বাচনে যাবো কি না সেটা বলতে পারি না। তবে, একটা কথা বলতে পারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মাঠে থাকবো।

জনসভায় তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যেভাবে জীবন দিতে গিয়েছিলাম, সেভাবে জীবন দিতে বলবো না। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অন্তত রাস্তায় থাকুন।

বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসা ছাড়াই তাকে জোড় করে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার কি দোষ ছিল? তিনি দেশের জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন। সেজন্য এ সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে। কারণ এ সরকার জনগণকে ভয় পায়। তার ৫ জানুয়ারি প্রহসন করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। তিনি আরো বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে দেশ ত্যাগ বাধ্য করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। সেই প্রধান বিচারপতি লিখেছে, যে দেশের প্রধানবিচারপতি ন্যায় বিচার পায় না, সে দেশের জনগণ কিভাবে ন্যায় বিচার পাবে। আপনারা কি আগামী নির্বাচন খালেদা জিয়াকে ছাড়া হতে দেবেন? ৫ জানুয়ারি নির্বাচন খালেদা জিয়া বয়কট করার কারণে নির্বাচন হয়নি। এবারও খালেদা জিয়াকে ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। সাত দফার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু রাখতে পারেন না। জনগণের জোয়ার বাধা দিয়ে রাখা যায় না। আওয়ামী লীগের সময় শেষ। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। যদি না দাঁড়ান, তাহলে জনগণ একদিন আপনাদের কাছে তার কৈফিয়ত দাবি করবে।

খালেদাকে মুক্ত করতে ঐক্যফ্রন্ট অটুট রাখতে হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি বিএনপির সভায় আসিনি, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের সভায় এসেছি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে ঐক্যফ্রন্ট অটুট রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এর আগে শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এবার আলোচনায় বসেছেন। যেদিন আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া, তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। টাঙ্গাইল থেকে সড়কপথে এসেছি, রাস্তায় রাস্তায় বাধা এসেছে। আমাকেও ফেরাতে পারেনি। এই মাঠের মানুষদেরও পারেনি।

তিনি বলেন, বিএনপি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দেয়নি। আওয়ামী লীগ রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, হাসিনা কথা দিয়েছিলেন জনসভায় বাধা দেবেন না। কিন্তু আমার গাড়ি পাঁচবার ধরেছে। তারপর আমাকে অন্য রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকবো বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধরে বেঁচে থাকবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই জনসমুদ্র একটা কথাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের মানুষ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা গত ১০ বছরে ভোটের অধিকার হারিয়েছি। আইনের সামনে দাঁড়িয়ে সমান অধিকার হারিয়েছি। আমরা এগুলো ফেরত চেয়েছিলাম, আমরা সংলাপে বসেছিলাম। কিন্তু সফল হয়নি। কারণ, স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।

তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম সংসদ ভেঙে দিতে হবে, আমরা বলেছিলাম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা মানেননি। ৭ নভেম্বর আমরা সবশেষ সংলাপে বসেছিলাম। তারা একটি কথা দিয়েছিলেন যে, আমরা নির্বিঘেœ সভা-সমিতি করতে পারব। কিন্তু সেই কথাও রাখেননি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই কথার বরখেলাপ করেছেন। মওদুদ আহমদ বলেন, দুই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছেন। আপনারা বলেছিলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে নির্জন কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা দেখলাম আপনারা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। আমরা জানতাম নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে সবাই স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারবে। কিন্তু দেখলাম এই জনসভায় আপনারা বাধা দিলেন।

তিনি আরো বলেন, এই দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। তবে এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে আর ক্ষমতায় যেতে দেব না। আমরা গণজেয়ার তৈরি করবো, সেই গণজোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলছি, নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবো। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেবো না।

তিনি বলেন, নির্বাচন ২৩ জানুয়ারি হলে অসুবিধা হতো না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার যা শুরু করেছে তাতে নির্বাচন করা সম্ভব না। বিমানবন্দর থেকে এখানে আসতে আমার গাড়ি দু’বার আটকে দিয়েছে, আমি অপিরিচিত কেউ না। আমার গাড়ি কেন আটকাবে। ‘ওরা মনে করেছে রাস্তা বন্ধ করে, গাড়ি আটকে, গ্রেফতার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে, সে আশায় গুড়ে বালি।’ তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীকে এতো ভয় পান কেন। এতো কিছু হয়েছে তারাতো ক্ষমতা নেয়নি। আমরা সামরিক বাহিনী চাই না, কিন্তু শেখ হাসিনাকেও চাই না।

ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনারা যদি মনে করেন এক মাঘে শীত যায় তাহলে ভুল করবেন। এক মাঘ যদি খালেদা জিয়া জেলে থাকেন তাহলে শেখ হাসিনাকে দশ মাঘ থাকতে হবে। আপনারা বলছেন নির্বাচনে আসুন, কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের নেত্রীকে জেলে রেখে কীভাবে নির্বাচনে যাবে। বলেন মান্না।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলাম। তিনি বলেছিলেন সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না, গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু আমরা কি দেখলাম, তাহলে আমরা কি ধরে নেবো হয় প্রধানমন্ত্রীর কথা প্রশাসন মানে না, অথবা তিনি দিনে আমাদের সঙ্গে এক কথা বলেন, আর রাতে প্রশাসনকে এক রকম নির্দেশ দেন।

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে? দেশের ঘটনা কী? আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপসহীন নেত্রী কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? তিনি আরো বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আজীবন জেলখানায়। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না।

শেখ হাসিনা বলেছেন গ্রেফতার হবে না কিন্তু পুলিশ বসে নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান করবো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিন। জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বলবো জনগণের মনের ভাব বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন তাহলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। শেখ হাসিনাকে নামান, নুরুল হুদাকে নামান, নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। দেশে একদিন অবশ্যই গণতন্ত্রের উৎসবের ভোট হবে তবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভিত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত।

তিনি বলেন, এবার আপনারা জয়ী হবেন, জয়ী হলে কি হবে? কৃষক শ্রমিকদের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কৃষকের পণ্যের মূল্য নেই, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি আরো বলেন, এ সরকারের ভিত কী। তাদের ভিত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবী মামলা, গ্রেফতার। আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। এখানে যারা এসেছেন সবাইকে কি গ্রেফতার করা সম্ভব? এসময় সবাই বলেন, না সম্ভব না।

এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, তাহলে আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় নিশ্চিত।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় শারিরীক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি ড. কামাল হোসেন। তবে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনসভায় যুক্ত ছিলেন।

এসময় মোবইল ফোনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সংলাপে গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা না শুনে তফসিল দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না। উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরবর্তী কর্মসূচিতে অবশ্যই রাজশাহী আসবেন।

সভাপতির বক্তব্যে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী থেকে সকল প্রকার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সকল বাধা উপেক্ষা করে এই মহাসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে বেগম জিয়ার মুক্তি, তফশিল বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবীতে কঠোর আন্দালনে নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহবান জানান এই নেতা।#( প্রেস বিজ্ঞপ্তি )#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.