সন্তানের সামনে গৃহবধুকে গলা ধাক্কা দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: শ্যালিস বৈঠকে সন্তানদের সামনে বিচার প্রার্থী গৃহবধুকে গলা ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গনমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানিয়ে বিচার দাবি করেন গৃহবধু প্রতিমা রানী।
এর আগে মঙ্গলবার(২৩ জুলাই) রাতে হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় শ্যালিস বৈঠকে উপস্থিত জনতা ও গৃহবধূর সন্তানদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গৃহবধু প্রতিমা রানী উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের মধ্যকদমা খামার পাড়া গ্রামের উজ্জল চন্দ্রের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং একই গ্রামের নরেন্দ্র নাথের মেয়ে।
নির্যাতিত গৃহবধু ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশী সচিন চন্দ্রের ছেলে দুই সন্তানের জনক উজ্জল চন্দ্রের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে স্বামী পরিত্যাক্তা দুই সন্তানের জননী প্রতিমা রানীর। গত মাসে প্রেমের টানে বাড়ি ছাড়েন প্রেমিক যুগল উজ্জল ও প্রতিমা রানী। সেখানে রেজিস্ট্রিমুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিয়ে মেনে নেয়ার অজুহাতে উজ্জলের পরিবার তাদেরকে বাড়িতে ফেরান।
মঙ্গলবার রাতে তারা বাড়ি ফিরলে তাদেরকে নেয়া হয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর বাড়িতে। সেখানে উভয় পক্ষ ও স্থানীয়দের নিয়ে আপোষ মিমাংশার বৈঠকে বসেন চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। প্রথম দিকে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের চেষ্টা করেন মাতব্বররা। সেখানে ব্যর্থ হলে তাদের বিবাহের সকল প্রমানপত্র কেড়ে নেয়া হয়। সংসার টিকাতে মাতব্বরদের হাতে পায়ে ধরেও মন গলাতে পারেনি গৃহবধু প্রতিমা রানী। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিবাহ বিচ্ছেন মেনে না নেয়ায় গৃহবধূ প্রতিমা রানীকে তার সন্তানদের সামনে গলা ধাক্কা দিয়ে বাসার মেঝেতে ফেলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু।
চেয়ারম্যানের এমন আচরনে বৈঠকে থাকা উপস্থিত জনতা হতভম্ব হয়ে পড়েন। প্রতিমা রানীর সন্তানদের আর্তনাদে কান্নার রোল পড়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে। এতেও ক্ষান্ত হননি মাতব্বর চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। অবশেষে গৃহবধুকে তার বিয়ে কাগজপত্র লোপাট করে তাকে জোর পুর্বক গাড়িতে তুলে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে গৃহবধূ ওই রাত ৪টার দিকে স্বামী উজ্জল চন্দ্রের বাড়িতে উঠেন। সেখানেও তাকে মেনে নিতে অপরগতা প্রকাশ করেন তার শ্বশুর সচিন ও উজ্জলের প্রথম স্ত্রী শিউলী রানী। স্ত্রীর দাবিতে উজ্জলের বাড়িতেই অবস্থান করছেন গৃহবধূ প্রতিমা রানী।
প্রতিমা রানী বলেন, আমাদের বিয়ের বিচ্ছেদ করাতে জোর করা হয় বৈঠকে। আমি রাজি না হওয়ায় বাচ্চু চেয়ারম্যান আমাদের বিয়ের কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। আমার স্বামী উজ্জল এর প্রতিবাদ করায় তাকেও মারপিট করেন আমার মামা শ্বশুর। বিয়ে করায় আমাদের অপরাধ। আমাকে নষ্টা মেয়ে বলে বাজে গালিগালাজও করেন চেয়ারম্যান। শ্বশুরের মোটা অংকের টাকার জোরে আমার উপর অবিচার করা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।
নির্যাতিত গৃহবধূর ছেলে পল্লল রায় ও পরিতষ বলেন, আমাদের সামনে আমাদের মাকে কয়েকবার গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন বাচ্চু চেয়ারম্যান। আমরা হাতে পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারি নি। আমরা এর বিচার চাই।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা স্থানীয় ভেলাগুড়ি বোর্ডেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইবনে ওহাব আল মাহমুদ মুরাদ বলেন, উপজেলার চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার বাসায় শ্যালিস বৈঠক হয়। তবে বিষয়টি আপোষ করে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। তবুও প্রতিমা কেন তার স্বামীর বাড়িতে পুনরায় অবস্থান নিলো তা জানি না। গৃহবধুকে গলা ধাক্কা দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।
হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় বৈঠকের বিষয় জানি না। তবে গৃহবধূকে গলা ধাক্কা দিয়ে থাকলে তা ঠিক করেন নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু বলেন, প্রতিমা রানীর পুর্বের স্বামী তাকে ফেরত নিতে চাওয়ায় আমার বাসায় উভয় পক্ষই বৈঠকে বসেছিল। সেখানে দ্বিতীয় স্বামীকে ছেড়ে প্রথম স্বামীর ঘরে যাবে জন্য প্রতিমা রানীকে তার প্রথম স্বামীর কাছে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছি। তাকে গলা ধাক্কা দেয়ার অনেকেই ছিল। আমি চেয়ারম্যান কেন গলা ধাক্কা দিব?। এটুকু না করলে তো শ্যালিস বৈঠক করা যাবে না। আপনারা এভাবে লিখলে বিচার শ্যালিস করা যাবে না তো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.