সকল কাজের কাজী আসল কাজে ফাঁকি?, রামেকের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল চিকিৎসক শিক্ষককে পিছনে ফেলে কট্টর জামায়াত সমর্থক একজন শিক্ষক এখন ক্ষমতার শীর্ষে।

তিনি একাধারে রামেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ) ডিপার্টমেন্টের কোঅর্ডিনেটর, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ২টি অনুষদের ডিন, একটি অনুষদের পরীক্ষা কমিটির সভাপতিসহ বিভিন্ন পরিদর্শন কমিটির সভাপতি/সদস্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নার্সিং পরীক্ষার থিসিসের পরীক্ষক।

এছাড়া নগরীর একটি ওষুধের দোকানে নিয়মিত প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন তিনি।

সকল কাজের কাজী এ শিক্ষক হলেন অধ্যাপ ডা. জাওয়াদুল হক। অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যই তিনি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আসল কাজ (রামেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষকতা) ফাঁকি দিয়ে চিকিৎসা শিক্ষার সকল মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরফলে রামেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে রামেকের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী স্বাচিপের (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) বিটিসি নিউজকে জানান, অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক একজন কট্টর জামায়াত সমর্থক শিক্ষক। তার চলাফেরা সব জামায়াত-বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সাথে।

তিনি নগরীর সপুরা ছয়ঘাটি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এলাকার এক জামায়াতীর ওষুধের দোকানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আমলে অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শিক্ষককে পিছনে ফেলে ক্ষমতার শীর্ষে।

তারা আরও জানান, ডা. জাওয়াদুল হক প্রায় ২০ বছর যাবৎ চাকরি করছেন রামেকে। মাঝে গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে বদলি হলেও দু’বছর পরই ফিরে আসেন রামেকে।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি চাকরির পাশাপাশি রাজশাহীর তৎকালীন বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের এমপিএইচ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ডিপার্টমেন্টের কোঅর্ডিনেটর হিসেবে অদ্যাবধি চাকরি করছেন তিনি। একইসাথে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের প্রিয়পাত্র হিসেবে আওয়ামী সমর্থক সকল শিক্ষককে পিছনে ফেলে একাই পান সোস্যাল মেডিসিন, নার্সিং ও ডেন্টালসহ তিনটি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব।

সম্প্রতি ডেন্টালের ডিনের দায়িত্ব থেকে বাদ পড়লেও বহাল আছেন অন্য দু’টিতে। সেই সাথে নার্সিং অনুষদের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি, রামেবি অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি, নবায়ন, আসন বৃদ্ধি, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সভাপতি/সদস্য, বিভিন্ন পরীক্ষার ভিজিলেন্স টিমের সদস্যসহ সব দায়িত্বেই থাকেন এ প্রভাবশালী শিক্ষক। এরফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে তার মূল কর্মস্থল রামেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম।

জানতে চাইলে রামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, ডা. জাওয়াদুল হক বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন ক্লাস নেয়ার অনুমতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করে কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ডিপার্টমেন্ট কোঅর্ডিনেটর হিসেবে চাকরির সুযোগ নেই।

এদিকে আরও অভিযোগ রয়েছে, রামেবির নার্সিং অনুষদের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থাকার সুবাদে অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক ২০১৮ সালের প্রথম বর্ষ নার্সিং চুড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন এবং মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন।

এসব কাজে আর্থিক সুবিধা থাকায় তিনি ভিসির সাথে যোগসাজসে বেশিরভাগ শিক্ষককে বাদ দিয়ে তাদের পছন্দের মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট সব কাজে নিয়োগ দেন। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একই শিক্ষককে একই বিষয়সহ একাধিক বিষয়ের প্রশ্ন সেটার ও মডারেটর বানিয়েছেন।

এতে করে প্রশ্নের মান এবং গোপনীয়তা রক্ষা না হওয়াসহ সাজেশনের নামে প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগ উঠে।

এছাড়া ওইসব শিক্ষকদেরই মৌখিক ও ব্যবহারিকের পরীক্ষক বানিয়েছেন। এমনকি একজন শিক্ষককে একদিনে একসাথে দু’টি বিষয়ের মৌখিক ও ব্যবহারিকের পরীক্ষক নিয়োগ দেন তিনি।

এছাড়া ওই সব শিক্ষকদেরই আবার পরীক্ষা চলাকালীন (পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত) ভিজিলেন্স টিমের সদস্য নিয়োগ দেন। এমনকি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হয়েও ডা. জাওয়াদুল হক শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধা নিতে নিজেও এসব ভিজিলেন্স টিমের সদস্য হন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী ভিজিলেন্স টিমের সদস হিসেবে কোন দিনই তিনি পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকেননি।

নার্সিং পরীক্ষায় এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে শতকরা ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে এমন অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে বেসরকারী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স কোঅর্ডিনেটর হিসেবে চাকরির বিষয়টি স্বীকার করে অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক দাবি করেন আমি সেখানে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করি। কোন প্রফেসর না থাকায় আমাকে কোর্স কোঅর্ডিনেটর করা হয়েছে। এতে বিধি লঙ্ঘন হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ প্রেরক রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.