সংসদের অধিবেশনে গেলেন না শিশির অধিকারী

(সংসদের অধিবেশনে গেলেন না শিশির অধিকারী–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: না, তিনি যোগ দিলেন না সংসদের বাদল অধিবেশনে। আজ সোমবার (১৯ জুলাই) অধিবেশনের প্রথম দিনটা তিনি শান্তিতেই কাটালেন দিল্লি থেকে প্রায় ১৭০০ কিমি দূরে কাঁথিতে নিজের বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জে’
দিল্লি যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়ি থেকেই আজকাল তেমন একটা বের  হচ্ছেন না কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী। এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপিতে সম্ভবত সবচেয়ে লড়াকু মুখ বিধানসভায় বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা। যে শুভেন্দুই সদ্য ফেলে আসা বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে অবাক করে দিয়েছিলেন সকলকে।
আসলে, নির্বাচনের আগে কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় তৃণমূল সাংসদ শিশির বাবুর মঞ্চে উপস্থিতি নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল বিস্তর। তাঁর সাংসদ পদ খারিজের দাবি জানিয়ে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার দ্বারস্থ হন তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরই প্রেক্ষিতে তাঁর প্রকৃত অবস্থান জানতে চেয়ে অধ্যক্ষের সচিবালয় থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে কাঁথির সাংসদকে। আজ সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে এই প্রতিবেদক তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁর স্পষ্ট কথা, “আমি তো কিছু করিনি, যা করার ওঁরাই করেছেন। আমি তো পার্টি চেঞ্জ করিনি।
অন্য কোনও দলে যোগও দিইনি। অন্য কোনও দলের সদস্যপদও গ্রহণ করিনি। হাতে তুলে নিইনি পতাকাও। দল পরিবর্তন করেছে আমার ছেলে। এরপরেও যদি আইনে থাকে, আমাকে তাড়িয়ে দেবে, দিক।”
মাত্র কিছুদিন আগেও ৮০ পার হওয়া শিশির অধিকারী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব  মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শেষ কথা। তৃণমূল কংগ্রেসের একইসঙ্গে জেলা চেয়ারম্যান এবং সভাপতি পদ সামলেছেন একার হাতেই। রাজনৈতিক ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবেও শিশিরবাবু ছিলেন প্রবাদপুরুষ।
নন্দীগ্রামে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনে সফলভাবে পথ দেখানোর পর ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত  নির্বাচনের আগে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে- নন্দীগ্রামের সাফল্যই বাংলায় ক্ষমতার পালাবদল ঘটাবে। দ্রুত অবসান হবে বামপন্থীদের দীর্ঘদিনের  অপশাসনের।
কিন্তু এবছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছেলে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের মন্ত্রিত্ব এবং সব পদ ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পরেই সম্পূর্ণ বদলে যায় পরিস্থিতি। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে ছিন্ন হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর তৃণমূলের দীর্ঘদিনের পারস্পরিক বিশ্বাস এবং ভরসার সম্পর্ক। অথচ শিশিরবাবুর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তার সুবাদে কাঁথির এই অধিকারী পরিবারই একদিন হয়ে উঠেছিল মেদিনীপুরের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত বিশ্বাসের জায়গা। ২০০৯  থেকেই শিশিরবাবু নিজে কাঁথির সাংসদ। ওই বছরেই তমলুকের সাংসদ নির্বাচিত হন প্রথমে তাঁর মেজছেলে শুভেন্দু।
পরে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ায় সেই জায়গায় আসেন আর এক ছেলে দিব্যেন্দু  অধিকারী। ছোটছেলে সৌম্যেন্দুও কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছিলেন বাবার উত্তরসূরি হিসেবে। সেই পদ এখন আর নেই। তিনিও এখন দাদা শুভেন্দুর পথ ধরে গেরুয়া শিবিরে।
কিন্তু দিব্যেন্দু তৃণমূল ছাড়েননি। তবু সাংসদ পদে থেকেও দলে কার্যত ব্রাত্য। কারণটা স্পষ্ট, দিব্যেন্দু শিশির অধিকারীর পুত্র, শুভেন্দুর সহোদর। তাছাড়া, তৃণমূলের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভোটের কিছুদিন আগে হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ হিসেবে। ফলে বেজায় চটেছিল দলীয় নেতৃত্ব। দিব্যেন্দুও কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত দিল্লি রওনা হননি। কাঁথির বাড়িতেই ছিলেন। সংসদের বাদল অধিবেশনে তিনি আদৌ যোগ দেবেন কিনা, তা জানা যায়নি।
লক্ষ্যণীয়, দৃঢ়চেতা শিশিরবাবু কিন্তু এই প্রতিবেদককে দ্বিধাহীনভাবেই  ফোনে জানালেন, অধ্যক্ষের সচিবালয়ের চিঠির উত্তর তিনি অবশ্যই দেবেন। এবং যথাসময়েই দেবেন। তাঁর মতে, তৃণমূলের কথার ভিত্তিতেই এই নোটিশ। তিনি বললেন, দিল্লিতে তাঁর ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা আছে। ইচ্ছে আছে, ঐ সময়ে অন্তত একদিনের জন্য হলেও সংসদের বাদল অধিবেশনে উপস্থিত হওয়ার।
অত্যন্ত ভদ্র এবং অতিথিপরায়ণ শিশির অধিকারী কিন্তু রীতিমতো স্পষ্টবক্তা। রাখঢাক করে কথাবার্তা তাঁর ধাতে সয় না। তবে রাজনৈতিক সৌজন্যকেও বিসর্জন দেন না তার জন্য। দীর্ঘ পরিচিতির সূত্রে এই প্রতিবেদকের কাছে অনেক চাপা ক্ষোভ উগরে দিলেও, তৃণমূলের শীর্ষনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তাঁর দলের নাম করে কোনও অভিযোগ কিন্তু করলেন না তিনি। হাবেভাবে বুঝিয়ে দিলেন মাত্র।
বললেন, ভোটের মুখে ওদের সভায় আমি যাইনি কারণ, বক্তৃতা দিতে গেলেই ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বলার জন্য আমার ওপরে অনেক চাপ আসতো। কিন্তু বাবা হয়ে ছেলেকে এভাবে অযথা আক্রমণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দ্বিতীয়কথা, আমি বারবার ওঁকে (নেত্রীকে) বুঝিয়ে ছিলাম, নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোটা ঠিক হবে না। উনি শুনলেন না, দাঁড়িয়ে হেরে গেলেন।
এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আশাহত বিজেপি কর্মীসমর্থকদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছুটে বেড়াচ্ছেন বাংলার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। তবে দলকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আত্মসমালোচনার সুরও শোনা যাচ্ছে তাঁর কন্ঠে।
গতকাল রবিবার (১৮ জুলাই) নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেরই চণ্ডীপুরে দলীয় কর্মীদের এক সভায় নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু মন্তব্য করেন, আত্মতুষ্টিই অনেক জায়গায় পার্টির খারাপ ফলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সতর্কও করেন শুভেন্দু। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও গতকাল রবিবার কিন্তু তৃণমূল সহ বিভিন্ন দলের শতাধিক নেতাকর্মী বিরোধী দলনেতার হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #  

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.