সংবাদ প্রকাশের জেরে বরিশালে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা : থানায় মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি: সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যায়যায় বেলার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ মোল্লা শাওনকে  নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। জানা যায় চলতি মাসের গত ৮ তারিখে রোজ সোমবার দুপুর আনুমানিক ১:৪৫ মিনিটের সময় মোঃ মোল্লা শাওন বরিশালের সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে একটি মামলার হাজিরা শেষে মোটরসাইকেল যোগে ঝালকাঠি যাওয়ার পথে।
ঝালকাঠি বরিশাল মহাসড়কে কাচারী বাড়ি নামক স্থানে পাঁচটি মোটরসাইকেল প্রতিরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো অবস্থায় কোপানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা। মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় মোল্লা শাওনের বাম হাতে বগি দাও দিয়ে কোপ দেয় সন্ত্রাসীরা।এতে করে শাওনের কব্জির অর্ধেক কেটে যায়। তবুও দমে যাননি শাওন, জীবন রক্ষার প্রাণপণ তাগিদে তিনি ডান হাতে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন বৃষ্টি থাকার কারণে রাস্তা প্রায় ফাঁকাই ছিল। এই সুযোগটি গ্রহণ করে সন্ত্রাসীরা।
সন্ত্রাসীরা বোগি দাও দিয়ে শাওনের মাথায় কোপ দিলে মাথায় থাকা হেলমেট ২ খণ্ড হয়ে রাস্তার দুই দিকে চলে যায়। শাওনের মোটরসাইকেলের ডান দিকে থাকা আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা জি আই পাইপ দিয়ে শাওনের ডান হাতে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলে হাতের একটি হাড় ভেঙে যায়। ওই ভাঙ্গা হাত নিয়েই শাওন মোটর বাইকে এর এক্সিলেটর চেপে জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটেই চলছিলেন। এমত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা শাওনের দুই পাশ ঘিরে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে অঙ্গে এলোপাথাড়ি  কোপাতে শুরু করে।
শাওনের মোটরবাইক যখন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার রায়পুরা কাচারী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় আসে তখনই শাওনের শরীর আস্তে আস্তে নিথর হয়ে আসে। জ্ঞান হারিয়ে মটরবাইক থেকে পড়ে যান শাওন। শাওনের পড়ে যাওয়া দেখে মোটর বাইক ঘুরিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় জনতা শাওনকে একটি অটোতে তুলে নিয়ে যায় ঝালকাঠি থানায়।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম তার সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে শাওনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় ঝালকাঠি হাসপাতালে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঝালকাঠি থানা এবং নলছিটি থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে পুলিশি ভ্যানে করে শাওনকে নিয়ে আসা হয় বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে। বর্তমানে শাওন এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। শাওনের শরীরে প্রায় ১৭ টি কোপের চিহ্ন রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য জিয়াই পাইপ দ্বারা আঘাতের চিহ্ন। শাওনের বাম হাতের কবজির প্রায় অর্ধেকটা কেটে গেছে এবং কয়েকটি রক্তনালী কাটা পড়ে গেছে। ওই দিনের নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাওন অশ্রুসিক্ত নয়নে কাপা স্বরে তার সহকর্মীদের কাছে লেখনীর মাধ্যমে দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার বিনীত অনুরোধ জানান।
শাওন বলেন, আসিফ শিকদার মানিক, আবু আক্তার, শাহীন, শোভন, বাবু হাওলাদার, নাঈম তালুকদার সহ আরো প্রায় ছয়-সাত জন তাকে জীবনের তরে শেষ করে দেয়ার জন্য এই হামলায় অংশ নেয়। আক্রমণকারীদের পেছনেই অন্যান্য আসামিরা কয়েকটি বাইক নিয়ে শাওনকে তারা করছিল বলে জানান শাওন।
ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি আমতলার বাসিন্দা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আসিফ সিকদার মানিক কিছুদিন আগে ঝালকাঠি থানা পুলিশের কাছে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। মানিকের এই ধরা পড়ার হ্যান্ডকাফ পরিহিত ছবি সহ মোঃ মোল্লা শাওন নিউজ প্রকাশ করলে ইয়াবা ব্যবসায়ী আসিফ সিকদার মানিক দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন জেল থেকে বের হয়ে বরিশাল।সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে মোঃ মোল্লা শাওন ও ঝালকাঠির লাসা মিজান সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করে। এই মামলার হাজিরা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মোঃ শাওন বরিশাল সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে এসেছিলেন।
অপরদিকে ঝালকাঠি জেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক বিতর্কিত মেম্বার আবু আক্তার তার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার নাম করে প্রায় ১২ জনের কাছ থেকে ঘুষ  গ্রহণ করেন।
সাংবাদিক মোল্লা শাওন সাবেক এই মেম্বারের ঘুষের টাকা গ্রহণ এবং স্থানীয় ঐ ইয়াবা ব্যবসায়ী আসিফ শিকদার মানিকের ইয়াবা ব্যবসার সংবাদ প্রকাশ করলে উল্লেখিত দুইজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংবাদকর্মী মোঃ মোল্লা শাওনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তারই পরপর দুইবার অস্ত্র নিয়ে গুন্ডা দিয়ে ওই সংবাদের অংশ হিসেবে শাওন এর উপর এহেন নৃশংস হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে ঝালকাঠি জেলার নলসিটি থানার অফিসার ইনচার্জ এর সরকারি মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি জানিয়েছেন ভিকটিম মোঃ মোল্লা শাওনের চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে মামলা নাম্বার ১১/২৪ এবং পুলিশের অভিযান অব্যাহত অতি দ্রুত চিহ্নিত আসামিদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মো. সেলিম হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.