শ্রমিকের ঘামে নয়, রক্তে অর্জিত মে দিবস

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: আমাদের চারপাশে যা কিছু উন্নত এবং সমৃদ্ধি,সব কিছুর পিছনে রয়েছে প্রচুর মানুষের রক্ত এবং শ্রম। তাদের সেই অক্লান্ত শ্রম এবং ঘামের বিনিময়েই আমরা একটু স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছি এই নশ্বর পৃথিবীতে।

কিন্তু আমরা তার বিনিময়ে সেই হতভাগা মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষগুলিকে আসলে কি দিচ্ছি? সেই মানুষগুলো নিজেরাই একদিন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলনে নেমেছিল।
ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথা। শ্রমিকরা তখনো শোষিত,সপ্তাহে ৬ দিনের প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টার অমানবিক পরিশ্রম করতো কিন্তু তার বিপরীতে মিলতো নগন্য মজুরী। অনিরাপদ পরিবেশে রোগ-ব্যধি, আঘাত,মৃত্যুই ছিল তাদের নির্মম সাথী। তাদের পক্ষ হয়ে বলার মত কেউ ছিলনা সেই সময়।
১৮৬০ সন শ্রমিকরাই মজুরী না কেটে দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রম নির্ধারনের প্রথম দাবী জানায়। কিন্তু কোন শ্রমিক সংগঠন ছিলনা বলে এই দাবী জোরালো করা সম্ভব হয়নি।
এই সময় সমাজতন্ত্র শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। শ্রমিকরা বুঝতে পারে বনিক ও মালিক শ্রেণীর এই রক্ত শোষণ নীতির বিরুদ্ধে তাদের সংগঠিত হতে হবে।
বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাড়িয়ে সারাবিশ্ব। মানুষ আজ ঘরবন্দি একটি ভাইরাসের কারণে। সারা দেশ আজ স্তব্ধ,ব্যবসা বন্ধ,কর্মহীন মানুষ সারা দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। এ পরিস্থিতির মধ্যেই সেই বিশেষ দিন,যে দিনটি প্রত্যেক বছর পালিত হয় শুধু শ্রমিকদের দিন হিসেবে।
বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা পহেলা মে দিবস। সারা বিশ্বের ৮০টি দেশে এই দিনটি পালিত হয় প্রতীকী দিন হিসেবে। শ্রমজীবি মেহনতি মানুষের এ আন্দোলনের পথ কখনও সহজ ছিল না। ছিলো নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে মোড়া। অত্যাচার, প্রতিরোধ, মিছিল, সংগ্রামের কাহিনী রয়েছে এ দিনটির পিছনে। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের দিন হিসেবে।
মে দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় হাজার হাজার শ্রমিকের একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপোষহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবসের ইতিহাস কমবেশী আমাদের সকলেরই জানা, ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেরালেই আমরা জানতে পারি শ্রমজীবী মানুষের সেই আন্দোলনের কথা। উনিশ শতকের শেষের দিকে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীতে আমেরিকায় প্রবল আন্দোলন হয়। তখন শ্রমিকদের কাজ করতে হতো দিনে ১৫ ঘণ্টা। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে তারা পুনরায় রাস্তায় নামে দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীতে। সে সময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শত বার্ষিকীতে ফ্রান্সের প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়৷ প্যারিসে ১৮৯০ সন থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন।
১৮৯১ সালে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়। বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করে যে সমস্ত সংগঠন তারা এ কথাই বলছে যে,কৃষিকাজ,গৃহ শ্রমিক, দিনমজুরদের মত যারা অ-প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কাজে শ্রম দিচ্ছেন,তারা সব ধরনের শ্রম আইনের বাইরে। শিল্প যখন থেকে সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকেই মালিক শ্রমিক দরকষাকষি রয়েছে।
এটি আগামীতেও চলবে। তারপরও মনে করি শ্রমিকরা ভাল থাকলে শিল্প ভাল থাকবে। বিভিন্ন শিল্পের জন্য একই নীতিমালা গ্রহণ না করে শিল্পের ধরন অনুযায়ী নীতিমালা গ্রহণ করলে সেটি শ্রমিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে৷ তবে অধিকার রক্ষা করতে আরো অনেক কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ জনেরা৷
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি এম মুছা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.