শেষ মুহূর্তের গোলে চেকদের হৃদয়ভাঙা হার উপহার পর্তুগালের

 

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: ফুটবল শক্তিমত্তার বিচারে পর্তুগাল আর চেক প্রজাতন্ত্রের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। এমনকি স্টারডমের কথা বিচার করলেও চেক ফুটবল দলে এই মূহুর্তে এমন কোনও খেলোয়াড় নেই, যার মার্কেট ভ্যালু পর্তুগিজ কোনো তারকার সমান। অথচ সদ্য শুরু হওয়া ইউরোর গ্রুপ এফ-এর দ্বিতীয় ম্যাচে তারকাশূন্য সেই চেক প্রজাতন্ত্রেই কিনা আটকে যেতে বসেছিল তারকায় ভরা পর্তুগাল।
এমনিতেই টুর্নামেন্টটার নাম ইউরো, যেখানে প্রতি আসরেই জন্ম নেয় একাধিক অঘটন, কোনো না কোনো রূপকথা, তার ওপর মাঝমাঠের মলিন পারফরম্যান্স; সব মিলিয়ে প্রথম ম্যাচেই একটা পর্যায়ে হারের শঙ্কা পেয়ে বসেছিল রোনালদোদের। কিন্তু তা আর হয়নি ম্যাচের ৬৯ মিনিটের এক আত্মঘাতী ও ৯২ মিনিটে করা নবাগত ফ্রান্সিসকো কনসেইসাওয়ের দারুণ এক গোলে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর পর্তুগালকে বাগে পেয়েও ম্যাচশেষে হৃদয়ভাঙার হতাশায় মাঠেই শুয়ে পড়তে দেখা যায় চেক ফুটবলারদের।
নিজেদের শেষ ইউরো মিশনে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে আজ লাইপজিগের রেড বুল অ্যারেনায় চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে মাঠে নামেন কিংবদন্তী পেপে ও রোনালদো। সঙ্গী বার্নার্দো সিলভা, রাফায়েল লিয়াও, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ক্যানসেলো, ডিয়েগো ডালোট, রুবেন ডিয়াজ, ডিয়েগো কস্তাদের মতো পরীক্ষিত ফুটবল তারকারা। আক্রমণভাগ থেকে রক্ষণের প্রতিটি পজিশনে তারকা ঠাসা পর্তুগালের স্কোয়াড। সেই তুলনায় চেক প্রজাতন্ত্রের দলে তারকা বলতে শুধু প্যাট্রিক শিক, গত মৌসুমের বেশিরভাগটাই যাকে লড়তে হয়েছে ইনজুরির সঙ্গে। এছাড়া মুখে নেওয়ার মতো নাম টমাস সৌচেক আর ভ্লাদিমির সাউফাল। স্কোয়াডে নেই আর তেমন কোনও ভরসাযোগ্য নাম। এমন একটা দলের সঙ্গে জয় দিয়ে শুরু করাটাই যেখানে সাধারণ ঘটনা হওয়ার কথা ছিল, মাঠে বল গড়াতেই এই সাধারণ ব্যাপারটা যেন হয়ে উঠল অসাধারণ।
ম্যাচের শুরু থেকে যদিও বল দখলে ও আক্রমণে দাপট ছিল পর্তুগালেরই, তবুও ফিনিশিংয়ে গিয়ে বার বার খেই হারাচ্ছিলেন রোনালদোরা। একদিকে সিআরসেভেনের গোলমিসের মহড়া, অন্যদিকে মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের বাকি সবাইকেই কেমন যেন নিষ্প্রভ দেখাচ্ছিল আজ। অবশ্য ভালো কিছু সেভ করেছেন চেক গোলরক্ষক জিন্ডরিচ স্টানেকও।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটে রাফায়েল লিয়াওয়ের ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে হেড নিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু একটুর জন্য সেটি পোস্টের বাঁদিক ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
৩২ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা পান রোনালদো। ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রস থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন সিআরসেভেন।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবারো গোলের চেষ্টা করেছিলেন রোনালদো। এবার তার শট রুখে দেন চেকিশ গোলরক্ষক জিন্ডরিচ স্টানেক। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য অবস্থাতেই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে পর্তুগাল। শুধু ফিনিশিংটাই হচ্ছিল না। এরই মধ্যে ম্যাচের ৬২তম মিনিটে ধাক্কা পর্তুগাল শিবিরে। ভ্লাদিমির সাউফালের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে গোল করেন লুকাস প্রভোড। সঙ্গে সঙ্গে চেক খেলোয়াড় ও সমর্থকদের উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো রেড বুল অ্যারেনা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর পর্তুগালের বিপক্ষে কোনো গোল পেল চেক প্রজাতন্ত্র।
অবশ্য, বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি চেক শিবিরের এই উল্লাস। সাত মিনিট বাদেই আত্মঘাতী গোলে লিড হারায় চেকরা। ছয় গজ দূর থেকে নেওয়া নুনু মেন্ডেজের শট আটকে দিলেও হাতে রাখতে পারেননি চেক গোলরক্ষক স্টানেক। বল ছুটে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থ রবিন রানাকের পায়ে লেগে জড়িয়ে যায় নিজেদের জালেই।
এরপর দুর্বল কিছু আক্রমন শানিয়েছে দুদলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনোটিই আর গোল হয়নি। ম্যাচের ৮১ তম মিনিটে গোলমুখের খুব কাছে বল পেয়েও বাইরে শট করেন চেক মিডফিল্ডার সৌচেক। পড়ে ৮৭ মিনিটে ডিয়েগো জোটার গোল বাতিল হয়ে যায় রোনালদো অফসাইডে থাকার কারণে।
ফলস্বরূপ, নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেও ১-১ সমতা। দুর্বল চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ড্রয়ের স্বান্তনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে বলে যখন ভাবছিল পর্তুগিজ সমর্থকরা, ঠিক তখনই দৃশ্যপটে হাজির দুই বদলি পেদ্রো নেটো আর ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে নেটোর পাস থেকে ছয় গজের মধ্যে বলটাকে পেয়ে জোরালো শটে জালে জড়িয়ে দেন ২১ বছর বয়সী কনসেইসাও। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক কোনো টুর্নামেন্টে এটাই ছিল তার প্রথম ম্যাচ।
নবাগত এই তরুণের গোলেই শেষ পর্যন্ত পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয় শিরোপাপ্রত্যাশী পর্তুগাল। আর দীর্ঘ ২৮ বছর পর পর্তুগিজদের বাগে পেয়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয় চেক শিবিরকে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.