শেখ হাসিনার উপহার হাড়িভাঙা আমে আপ্লুত মোদী-মমতা


কলকাতা-হাওড়া (পশ্চিমবঙ্গ) প্রতিনিধি: সময়টা ছিল সম্ভবত ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের সমাবেশের প্রস্তুতির তদারকি করতে এসে কলকাতার ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রশিং-এর কাছে অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায় চেয়ার পেতে বসেছিলেন সেই সময়ের ফায়ার ব্র্যান্ড বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অনুগামী পরিবৃত হয়ে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্নেহের এক তরুণ সাংবাদিক হঠাৎ হাজির সেখানে। তাঁকে দেখেই মমতা রীতিমতো আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠলেন, “ জানতো, আমাকে খুব সুন্দর একটা শাড়ি পাঠিয়েছেন হাসিনাদি। আমাদের প্রিয় শেখ হাসিনা। ঢাকাই জামদানি। ”কথাটা শুনেই দলের কৌতুহলী মহিলা কর্মীদের একের পর এক প্রশ্ন দিদিকে। জননেত্রীও বেশ উৎসাহের সঙ্গে শোনাতে বসলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যার সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্কের কাহিনী।
তারপরে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। জনতার রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে বাংলাদেশের। এদিকে পশ্চিমবঙ্গেও জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের জন্য মসনদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই বাংলার দিদি-বোনের মধ্যে ইতিমধ্যে বিনিময় হয়েছে অজস্র সৌজন্য। এসেছে অনেক আবেগঘন মুহূর্ত। কিন্তু সেই সব আবেগকেই হার মানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম উপহার- হাড়িভাঙা আম।
গত রবিবার (০৪ জুলাই) পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আর প্রীতির নিদর্শন ২৬০০ কেজি হাড়িভাঙা আম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো উপহার। এই উপহার পেয়ে প্রকৃত অর্থেই আপ্লুত মমতা।
প্রিয়জনদের মধ্যে অকাতরে বিলিয়েছেন উপহারের আম। হ্যাঁ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই উষ্ণ আন্তরিক উপহার পৌঁছে গেছে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কাছেও।
সৌজন্যের উষ্ণতা পৌঁছে যাচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে। প্রাপকের তালিকায় থাকছেন আরও কিছু মন্ত্রী, নেতা এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও। সব মিলিয়ে উপহারের আম সম্ভবত প্রায় ৩০০০ কেজি।
স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে অভিভূত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তাঁর প্রতিক্রিয়া, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিকতা গভীরভাবে স্পর্শ করেছে তাঁকে। শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও লিখেছেন তিনি। বলেছেন, “আমার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে আপনি যে উষ্ণ আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন, এই সুচিন্তিত উপহার তাকেই আবার আনন্দের সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ”ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অগ্রগতিতে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা আবারও প্রতিফলিত হয়েছে মোদীজির কথায়। উঠে এসেছে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কর্তব্য পালনের সদিচ্ছার বিষয়টিও।
মুজিব-কন্যার উপহার গভীর সুখানুভূতি জাগিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনেও। ‘শ্রদ্ধেয় হাসিনা দি’ বলে সম্বোধন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, আপনার পাঠানো আম পেয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের রংপুর জেলার হাড়িভাঙা আমের নাম আমি শুনেছিলাম, কিন্তু আগে কখনও খাইনি। আপনি এত আম পাঠিয়েছেন যে আমি দু’হাত ভরে বিলিয়েছি। এই আমের মধ্যে আপনার যে স্নেহ এবং বাংলাদেশের যে সৌরভ মিশে আছে তাকে আমি সম্মান জানাই। আমি সত্যিই আপ্লুত।
খুশির জোয়ার ত্রিপুরাতেও। অভিভূত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। হাড়িভাঙা আম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হাতে পেয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “উনি তো আমার মায়ের মতো”।
ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং জাতীয়স্তরের মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে এই উষ্ণ উপহারের কাহিনি। কেউ, কেউ একে ‘ম্যাঙগো ডিপ্লোম্যাসি’ হিসেবে অভিহিত করলেও বেশিরভাগই গুরুত্ব দিচ্ছে বন্ধুত্বের উষ্ণতাকে।
তথ্যের দাবী, একসময় এপার বাংলার মালদাই ছিল হাড়িভাঙা আমের মূল ফলনক্ষেত্র। ক্রমশ এটি ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের রংপুর জেলায়। এই প্রজাতির আমের এক একটির ওজন ৭০০গ্রাম থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। গোলাকৃতি বড় মাপের এই আম একা একজনের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। রংপুর জেলা এবং উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের রুজিরোজগার জড়িয়ে আছে এই হাড়িভাঙা আমের সঙ্গে। দেশের বাইরেও এই আমের অসংখ্য গুণগ্রাহী।
এদিকে এই হাড়িভাঙা আমকে ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের জনমনে। কলকাতার কলেজ স্ট্রীটের পাইকারি বাজার তো বটেই, খোঁজ পড়েছে নিউ মার্কেট, এমনকী বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় বাজারগুলোতেও। প্রশ্ন একটাই- পাওয়া যাবে নাকি হাড়িভাঙা আম ?
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.