লালমনিরহাট প্রতিনিধি: শৈশবে চরম দারিদ্র্যেতার সঙ্গে লড়াই করেছেন শিহাব আহমেদ। কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনো সবজি বিক্রি কিংবা ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা।
সেই শিহাব এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শুধু নিজের জীবন পাল্টেই দেননি, সমাজের অসহায় মানুষের জন্যও কাজ করছেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি, কারিগরি প্রশিক্ষণ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণসহ নানা সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তিনি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নে ১৯৯৫ সালে জন্ম শিহাব আহমেদের। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের ছেলে তিনি। ছোটবেলাতেই মাকে হারান। দারিদ্র্যেতার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছেন তিনি।
কখনো সবজি বিক্রি, কখনো রিকশা চালিয়ে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। ২০১৪ সালে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে চমক দেখান। পরে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপে গেবজে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন।
তবে বিদেশেও সংগ্রাম শেষ হয়নি তার। নির্মাণ শ্রমিক, হোটেলের ডিশ ওয়াশার, জুতা পালিশ থেকে শুরু করে নানা কাজ করেছেন নিজের খরচ চালানোর জন্য।
শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ২০১৮ সালে মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ ব্যবসা শুরু করেন শিহাব। এরপর ধীরে ধীরে তার ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার ব্যবসা বাংলাদেশ, তুরস্ক, দুবাই ও আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তুরস্কে ‘দ্যা অটোম্যান গ্রুপ’ নামে তার প্রতিষ্ঠান রিয়েল এস্টেট, কনস্ট্রাকশন, ট্যুরিজম ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দুবাইয়ে ‘শিহাব গ্রুপ’ নামে রয়েছে প্রাইভেট গাড়ির শোরুম ও আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান। আফ্রিকায় রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শিহাব শুধু নিজের সফলতায় থেমে থাকেননি। সমাজের দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ শুরু করেছেন। তার উদ্যোগে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, এক হাজার অজুখানা নির্মাণ করা হয়েছে এবং ১৫টি মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের (বুয়েট) পড়ুয়া শিক্ষার্থী মিরাজ বাবু বলেন, আমি এখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) লেখাপড়া করছি। গত ২০২২ সাল থেকে এখন পযর্ন্ত আমার লেখাপড়া করার জন্য শিহাব আহমেদ ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছি।
শিহাব আহমেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি, কোনো দরিদ্র শিক্ষার্থী যেন টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না করে। এ অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ চালু করেছি। আমার মতো যাতে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে লেখাপড়া করতে না হয়। আমি চাই, আমার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া শিক্ষার্থীরাও ভবিষ্যতে অন্তত একজন করে দরিদ্র শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াক। আমি যতদিন বেঁচে আছি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে থাকবো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.