চট্টগ্রামব্যুরো: জনবসতিহীন পাহাড়ে সড়ক ছাড়াই একটি সেতু নির্মাণ করেছে মিরসরাই উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিসের রাস্তায় শিমুলতলী ছড়ার ওপর ৩৪ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
সেতুর স্মৃতিফলকে নাম ও দৈর্ঘ্য লেখা থাকলেও কত টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে তা ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাধিকার যোগাযোগ করেও সেতুটির নির্মাণ ব্যয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হিঙ্গুলী-ফরেস্ট অফিসের সড়কটি ২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেদীনগর গ্রামে অবস্থিত। সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটারের মধ্যে বসতি থাকলেও শেষাংশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। নেই জনমানব। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ধানসহ বিভিন্ন রবিশষ্য চাষাবাদ করা হয়।
প্রায় পাঁচ বছর আগে হওয়া সেতুটির পশ্চিম পাশে সড়ক থাকলেও পূর্ব পাশে কোন সড়ক নেই। একটি সরু ছড়া দিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে বেয়ে আসা পানি প্রবাহিত হয়। কৃষকরা উৎপাদিত ধান, শাকসবজি কাঁধে জমির আইল দিয়ে নিয়ে যান। সড়কবিহীন জায়গায় সেতু করার ফলে কোনো কাজে আসছে না এটি।
স্থানীয় কৃষক মো. জেবাল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পাহাড়ের ভেতর কোনো জনবসতি না থাকলেও প্রায় ৮০ একর জমিতে বোরো ও আমন ধান, রবিশস্য (ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বরবটি), লেবু চাষ করা হয়। সেতুটি নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে পাহাড়ের ভেতর অনেক জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে না। আমরা চাই যেন দ্রুত সড়ক নির্মাণ করা হয়।
১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়ক যেহেতু হিঙ্গুলী ইউনিয়নে অবস্থিত; তাই সেতুটির অবস্থানও হিঙ্গুলী ইউনিয়নে। ওটা যদি করেরহাট ইউনিয়নে অবস্থিত হতো তাহলে আমি অবশ্যই রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করতাম।
২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হারুন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কটি হিঙ্গুলী ইউনিয়নে পড়লেও সেতুটির অবস্থান করেরহাট ইউনিয়নে। ওখানে সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমি জানি না। সেতুটির স্মৃতিফলকে হিঙ্গুলী ইউনিয়ন লেখা থাকলেও তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিসের সড়কে শিমুলতলী ছড়ার ওপর ৩৪ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। পাহাড়ে জনবসতি না থাকলেও কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আমাদের দায়িত্ব সেতু করা সড়ক নির্মাণ করা নয়। সড়ক তৈরির কাজ এলজিইডি দেখে। সেতু নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পরও কেন সড়ক তৈরি হয়নি এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন।
সেতুটির নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সেতুটির নির্মাণ ব্যয় কত ছিল এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাবে না। সেতুটিপ্রায় পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল; গোডাউনে অনেকগুলো ফাইলের মধ্যে এটির ফাইল নিচে চলে গেছে। ফাইল খুঁজে পেতে একটু সময় লাগবে। সেতুর স্মৃতিফলকে নির্মাণ ব্যয়ের অংশ মুছে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত না বলে দাবি করেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কের পাহাড়ের ভেতর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণ এবং সংযোগ সড়ক না থাকার বিষয়ে আমি খবর নিয়ে বলতে পারব।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.