শিবগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারকের স্ব-প্রণোদিত আদেশ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংর্ধণা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় স্ব-প্রণোদিত হয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আমলী আদালত শিবগঞ্জ এর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল মাজিষ্ট্রেট মো. হুমায়ন কবির।
বিটিসি নিউজ সহ স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি বিচারকের গোচরে আসলে তিনি নিজ উদ্যোগে এই আদেশ দিয়েছেন ২৭ ডিসেম্বর সোমবার। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে আগামী ২৪ জানুয়ারী/২২ এর মধ্যে প্রকৃত দোষীদের পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ও নাম ঠিকানাসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আহমেদ মাহবুব-উল ইসলামকে।
ঘটনার প্রকৃত ও সঠিক প্রতিবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাক্ষী ও ঘটনাস্থলের পূর্ণ বিবরণ ও ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা প্রতিবেদনে উল্লেখ করার কথাও বলা হয়েছে ওই আদেশে। আদালতের প্রথম কার্যবিধি হিসেবে (ক্রিমিনাল মিস কেস নং-১) সোমবার এ আদেশ দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ও ২৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বজলার রশিদ সনু কে লাঞ্চিতের যে সংবাদটি প্রকাশিত হয় তা তাঁর আদালতে গোচরীভূত হয়।
সংবাদটিতে শিবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বজলার রশিদ সনু কে আতিকুল ইসলাম টুটুল নামক এক ব্যক্তি সংবর্ধণা মঞ্চেই লাঞ্চিত করেন। যা বাংলাদেশের অস্বিত্ব কে এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিতের ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাকর ও অশনিসংকেত এবং ফৌজদারী অপরাধ। তাই এ অপরাধটি কাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তা সনাক্ত করতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এবং ১৯০(১)৯(সি) ধারায় স্বপ্রনোদীত হয়ে বিজ্ঞ বিচারক তদন্তের নির্দেশ দেন।
আদেশে বিজ্ঞ বিচারক তদন্ত কর্মকর্তা কে আগামী ২৪ জানুয়ারীর মধ্যে কার দ্বারা কিভাবে, কেন সংঘঠিত হয়েছে, তার বিস্তারিত ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র প্রস্তুতের পাশাপাশি অভিযুক্তদের সনাক্তকরন ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দী প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। সে সাথে প্রকাশিত পত্রিকার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের জবানবন্দী ও স্থানীয় স্বাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহনেরও নির্দেশ প্রদান করা হয় আদেশে।

এ ব্যপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুবুল ইসলাম (শিক্ষা ও আই টি) জানান, আমি তদন্তের নির্দেশ পেয়েছি। মন্তব্যের কিছু নাই। তদন্ত করে যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আমলী আদালত শিবগঞ্জ এর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল মাজিষ্ট্রেট মো. হুমায়ন কবির বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। এমন একজন সূর্য সন্তানকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় বিচার হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে অমর্যাদা ও অবমাননা করা হয়।
এছাড়া এমন ঘটনার বিচার না হলে অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে অসম্মান করার সাহস পেয়ে বসতে পারে সমাজের এসব অনিষ্টকারীরা। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্চিতের ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় দেখার পর নিজেকেই একরকম অস্বস্তি ও অস্থির লাগছিলো। তাই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এঘটনা তদন্তের জন্য আদেশ দিয়েছি। ঘটনার তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার পরই বিষয়টির বিচারের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর/২১ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনুর বক্তব্য চলাকালে তার মাইক বন্ধের সাথে সাথে মঞ্চে বাকবিতজ্ঞা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এঘটনায় রবিবার(১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যানারে ডাক বাংলোর সামনে এক মানববন্ধন আয়োজন করেন বজলার রশিদ সনু।
পরে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে ডাক বাংলো চত্তরে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে আতিকুল ইসলাম টুটুল। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারন পাঠাগারে একই ঘটনায় সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যানারে ২৩ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় প্রশাসনের তদন্ত দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনু।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনুকে লাঞ্ছনাকারী শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টুটুল খানের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খাইরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.