শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করলেন রাজশাহী’র ডিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে রাজশাহীকে নতুন রূপে ঢেলে সাজানোর প্রশংসনীয় কাজগুলোই করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াল ছোঁবল থেকে বাঁচাতে তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে ধূমপানে আকৃষ্ট হয়ে অকালেই ঝরে না যায় সেজন্য তিনি অবলম্বন করেছেন নতুন কৌশল। আর সেই উদ্যোগটি হলো- রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সকল ধরনের তামাকপণ্য বিক্রয় ইতোমধ্যেই তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরী ঘুরে এবং এসিডির নিজস্ব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে টার্গেট করে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানীগুলো অবৈধ ব্যবসায় মেতে উঠেছে।

বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে কোম্পানীগুলো নানা অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। অপকৌশলগুলোর মধ্যে তামাকপণ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে চটকদার তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা, শিশুখাদ্যের পাশে চোখ ও মন জুড়ানো তামাকের অবৈধ শো-কেস এবং ডিসপ্লে অন্যতম। শিক্ষার্থীদের ধূমপানে আকৃষ্ট করার এমন অপকৌশলের কাছে হার মেনে গিয়ে রাজশাহীর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালেই ঝরে পড়ছে। প্রথমে ধূমপান দিয়ে শুরু করে মাদকের সর্বনাশা নেশায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক কোমলমতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে।

রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বতর্মানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই তরুণ ও যুবক শ্রেণি। আর এজন্যই স্কুল-কলেজ পড়–য়া কোমলমতি মেধাবী তরুণ ও যুবক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তামাকের বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

তাদের অপকৌশলগুলোর অন্যতম হলো- এই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণিকে যদি তামাকের ভয়াল ছোঁবলে আকৃষ্ট করা যায় তাহলে তাদের ব্যবসা শতভাগ সফল। কেননা, যে একবার ধূমপানে আকৃষ্ট হবে তাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা খুবই কষ্টকর। আর এজন্যই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণি তামাক কোম্পানীগুলোর টার্গেট।’

এসিডি’র ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) শারমিন সুবরীনা বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে রাজশাহী মহানগরীতে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন-প্রণোদনা কী পরিমাণের রয়েছে তার ওপর এসিডি একটি জরিপ পরিচালানা করে।

জরিপে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত দোকানগুলোর ৭৭.৯৫% দোকানে তামাকপণ্য বিক্রয় করা হয়। এই দোকানগুলোর ৮২% দোকানে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদন প্রদর্শিত হচ্ছে। কাজেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘তামাকের মাধ্যমেই কোমলমতি শিশুরা মাদকের জীবননাশা নেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যারা তামাকপণ্য বিক্রয় করছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে তামাক বিক্রয় বন্ধের নির্দেশ দিলেই চলবে না। পাশাপাশি জেলা শিক্ষা অফিসারকে তার আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্য বিক্রয় বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরাও রাজশাহীর সামাজিক সংগঠন হিসেবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে করে কোমলমতিরা তামাকে আকৃষ্ট হয়ে অকালেই নষ্ট হয়ে না যায়।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘তামাক হলো মাদকের ভয়াবহ নেশায় আকৃষ্ট হওয়ার প্রথম ধাপ। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে কিংবা আশেপাশের দোকানগুলোতে সকল তামাকপণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের দোকানিদেরকে নির্দেশ দিয়েছি, আপনারা বিস্কুট কিংবা বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সিগারেট কিংবা কোনো ধরনের তামাকজাতপণ্য বিক্রি করতে পারবেন না।

এই নির্দেশনা না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সকল ধরনের তামাকপণ্য জব্দের একটা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন শিমুল।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.