শিক্ষা নগরী রাজশাহীর দেড়’শ বছরের প্রাচীন জ্ঞানের সম্ভার রাজশাহী কলেজ লাইব্রেরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘরজুড়ে বই আর বই। সাড়ে তিন লাখ বই নিয়ে রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরি। লাইব্রেরি জুড়ে ২৫০টি আলমারিতে সাজানো বইগুলো। কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নের কিছু বইও এখানে রয়েছে। তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, কলেজের প্রতিষ্ঠাকালেই শুরু হয় লাইব্রেরির কাজ। সেই হিসাবে প্রায় দেড়শ বছর।

এই লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে প্রাচীন বইও। এখানে ২০০ বছরের পুরনো পাণ্ডুলিপি, ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া-এর ৪৫টি খণ্ড রয়েছে। রয়েছে ৪০ হাজার অতি প্রাচীন বই।

জানা গেছে, কলেজটির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে দেড় লাখ বই রয়েছে। সেখানে দুই লাখ মিলে মোট সাড়ে তিন লাখ বই রয়েছে।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এক সঙ্গে ১৫০ শিক্ষার্থী বসে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরেজমিনে গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীরা বই পড়ছে। যদিও কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। এখানে কেউ অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা, কেউ চাকরির জন্য পড়াশোনা করে। প্রদীপ দাশ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজশাহী কলেজের এই লাইব্রেরিতে অনেক পুরনো বই আছে। বই পাগলরা এই বইগুলো পড়লে মুগ্ধ হবেন। এখানে যে ইতিহাস সংরক্ষিত আছে সেটা রাজশাহীর বেশির ভাগ লাইব্রেরিতেই নেই।

বিশেষত প্রাচীন ভারতীয়, ব্রিটিশ আমলের ইংরেজি বইসমূহ বেশ যত্ন করে রাখা আছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরি তার কার্যক্রম শুরু করেছিল কি না- সে বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একটি ভালোমানের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল।

ফলশ্রুতিতে ১৯১০ সালে কলেজের কমনরুম ভবনের ছোট তিনটি কক্ষ নিয়ে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯০৮-১৯১২ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিদর্শকবৃন্দ এসে লাইব্রেরির অবস্থান ও পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

পরামর্শ দেন একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের কথা বলা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালের মধ্যে লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ২৭৫। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত লাইব্রেরির বই ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল বার্ষিক চার হাজার টাকা। বই বাঁধাইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০০ টাকা। এতে রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ, পুঁথি ও সাময়িকীর সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজার।

বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী লাইব্রেরিতে আসেন, পড়াশোনা করেন। আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা স্থাপনের মাধ্যমে লাইব্রেরিটি তথ্যবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। রাজশাহী কলেজ লাইব্রেরিতে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি ভাষায় রচিত গ্রন্থ রয়েছে।

রয়েছে সংস্কৃত ভাষায় রচিত পড়া। শতাধিক প্রাচীন পুঁথি। সংস্কৃত সাহিত্যের বেদ, পুরাণ, মহাকাব্য, কাব্য, তন্ত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পুঁথিগুলো লেখা। এই পুঁথিগুলো দেশীয় উপকরণে প্রস্তুত। অনেকগুলো তুলোট কাগজে লেখা।

এই কাগজগুলো হরিতাল, অভ্র ইত্যাদির প্রলেপ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা। পুঁথিগুলো হরীতকী, হিঙ্গুল, অঙ্গার, ছাগদুগ্ধ, জবার কুড়ির সাহায্যে তৈরি কালিতে লেখা। কালির রঙ ঘন কালো। শর, ময়ূর বা শকুনের পালক দিয়ে তৈরি কলমে লেখা। এগুলো সেলাইবিহীন কাঠে পাটাতনে বাঁধা রয়েছে। কোনোটিতে পৃষ্ঠাঙ্ক দেওয়া আছে, কোনোটিতে নেই। লাইব্রেরিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত গ্রন্থসমূহ এই কর্নারে সাজানো রয়েছে- যাতে করে এটি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে সহজেই আকৃষ্ট করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্রাম্যমাণ সততা লাইব্রেরি’ করা হয়। এই লাইব্রেরির সুবিধা পাবে কলেজে আগত দর্শনার্থী ও অভিভাবকরাও। কলেজ চলাকালীন (সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা) পর্যন্ত সবাই এই সততা লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারবে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি কলেজে সান্ধকালীন লাইব্রেরির উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকে।

রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরিয়ান মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সৃজনশীল কল্পনাশক্তির পরিবেশনা, মানসিক উৎকর্ষসাধন, কারিগরি জ্ঞান, বিজ্ঞান ভাবনা ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে নয়, রাজশাহী কলেজ লাইব্রেরি অতীত ও বর্তমানের মাঝে সাঁকো হিসেবে মানবসমাজের ভবিষ্যৎ আলোকিত পথ রচনা করে চলেছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.