শিক্ষকরা সর্বদা ভালো মানুষ গড়ার কারিগর

ফিরোজ কবির: আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি প্রতি বছরের মতো এবারও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে পৃথিবীর সব শিক্ষকের প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতার চেয়ে মহৎ ও শ্রেষ্ঠ পেশা আর হতে পারে না। এটি যেমন সম্মানজনক, তেমনি এতে রয়েছে আত্মতৃপ্তি। শিক্ষকতা শুধুই পেশা নয়, একটি মহান ব্রত। শিক্ষক শব্দটির সঙ্গে জ্ঞান, দক্ষতা, সততা, আদর্শ, মূল্যবোধ শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন আদর্শ শিক্ষক ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-নির্বিশেষে সবার কাছেই শ্রদ্ধেয়। সব দেশে, সব সমাজেই শিক্ষকরা বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন।
তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যেমন ভক্তি পেয়ে থাকেন, তেমনি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকেন প্রভূত শ্রদ্ধা ও সম্মান। শিক্ষকতাই একমাত্র পেশা, যাতে পেশাদারি মনোভাবের চেয়ে সেবার দিকটাই বেশি পরিস্ফুটিত হয়। তাই এ পেশাকে অনেকেই পেশা না বলে ব্রত বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং এটাই হওয়া উচিত।
যারা শিক্ষকতা করেন বা শিক্ষাদান করেন, তারাই শিক্ষক। শিক্ষকদের মর্যাদা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। পবিত্র কোরআনে কারিম এবং হাদিসসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও শিক্ষকদের মর্যাদার কথা ভিন্ন ভিন্নভাবে বলা হয়েছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে অপরকে কোরআন শিক্ষা দেয় এবং নিজেও শিখে।’ আলোচ্য হাদিসে শেখানোর মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ’
পৃথিবীতে মাতা-পিতার পরেই শিক্ষকদের স্থান। মাতা-পিতা শিশুকে জন্ম দেন আর শিক্ষক তাকে মানুষরূপে গড়ে তোলেন। আজকের পৃথিবী যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারাও যে কোনো শিক্ষকের ছাত্র। শিক্ষকরা সর্বদা মানুষ গড়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন।
শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তবে শিক্ষকরা সে মেরুদন্ডের স্রষ্টা। গোটা মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত এবং শিক্ষকতার চেয়ে মরর্য্যাদাপূর্ণ পেশা আর একটাও নাই। শিক্ষকরা এ সমাজের প্রাণ। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, ‘He has served his nation in many capacities. but above all he is a great teacher from whom all of us have learnt much and will continue to learn.’ পৃথিবীতে যে যত মহৎ হোক না কেন, সে কোন না কোন শিক্ষকের অধীনে জ্ঞান অর্জন করেছে। তাই পৃথিবীতে যতগুলো সম্মানজনক পেশা আছে তার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। মানুষের মধ্যে যারা কৃতজ্ঞ শ্রেণীর তারা সার্বিকভাবে না হলেও ব্যক্তিগতভাবে কোন না কোন শিক্ষকের কাছে ঋণী এবং বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের সে অভিব্যক্তিও ফুটে ওঠে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি -এ. পি. জে. আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় এবং সবার মধ্যে সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক। ‘
শিক্ষক দিবসে আমি আমার সব শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমার শিক্ষাজীবনের সিঁড়ির ভূমিকা পালন করেছেন এবং অদ্যাবধি আমাকে অনুপ্রাণিত করছেন। আমি শ্রদ্ধা জানাই দেশের সব স্তরের শিক্ষকগণের প্রতি, যারা অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও জাতির ভবিষ্যতের মজবুত ভিত্তি গঠনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
সংবাদ প্রেরক ফিরোজ কবির, ব্যাংকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.