BTC News | বিটিসি নিউজ

আজ- শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আজ- ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শাবানা মাহমুদ কি হতে চলেছেন ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী?

শাবানা মাহমুদ কি হতে চলেছেন ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ওয়েস্টমিনস্টারকে স্তম্ভিত করে এবং সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ একাই লেবার সরকারকে ভরাডুবির দ্বারপ্রান্ত থেকে টেনে তুলেছেন। নাইজেল ফারাজের ‘রিফর্ম ইউকে’-র কাছে সবক‌’টি জনমত জ‌রি‌পে বিশাল ধস এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের আস্থা হারানোর মুখে, শাবানা মাহমুদ আধুনিক ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক অভিবাসন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুই মাসের কিছু বেশি সময়ে, বার্মিংহাম লেডিউডের এই এমপি শুধু লেবার পা‌র্টির ডুবন্ত জাহাজকেই রক্ষা করেননি, বরং উগ্র ডানপন্থিদের কৌশল ধার ধ‌রে এমন এক কঠোর নতুন পথ তৈরি করেছেন, যা তার প্রতিপক্ষদের হতভম্ব করে দিয়েছে।

ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম নারী হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে ইতিহাস গড়া শাবানা মাহমুদ অতীতের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি। যেখানে তার পূর্বসূরি ইভেট কুপার আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতায় হিমশিম খাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি ডেনমার্কের কঠোর সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ব্যবস্থার আদলে ‘শক অ্যান্ড অ’ (আকস্মিক ও তীব্র) কৌশল প্রয়োগ করেছেন। ‘শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার’ স্লোগানে চলতি সপ্তাহে উন্মোচিত তার প্রধান নীতিতে সকল শরণার্থী বা রিফিউজিদের জন্য বাধ্যতামূলক আড়াই বছরের পর্যালোচনা চালু করা হয়েছে। এই নতুন কঠোর নিয়‌মের কারণে ব্রিটেনে আশ্রয় এখন আর স্থায়ী কোনও সমাধান নয়। যদি আড়াই বছরের মধ্যে কোনও শরণার্থীর নিজ দেশকে ‘নিরাপদ’ বলে মনে করা হয়, তবে তাকে অবিলম্বে ফেরত পাঠানো হবে।

এছাড়া, মানবপাচারকারীদের ব্যবসায়িক মডেলে আঘাত হানার জন্য, অনিয়মিত বা অবৈধ পথে আসা যেকোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ২০ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার সময়কাল বাধ্যতামূলক করেছেন শাবানা, যা কার্যকরভাবে অবৈধভাবে আগতদের দ্রুত বসতি স্থাপনের সব আশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজের গতি অভূতপূর্ব। যেখানে আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরামর্শ করতেই মাস পার করতেন, সেখানে শাবানা মাহমুদ নিয়োগ পাওয়ার ৭৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে নীতি প্রয়োগ শুরু করেছেন। তিনি অবৈধ অভিবাসনকে কেবল একটি লজিস্টিক সমস্যা হিসেবে নয়, বরং একটি ‘নৈতিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা তার দেশকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে।

তার ভাষা, ডানপন্থিদের জনতুষ্টিবাদী বাগাড়ম্বরের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এই কৌশলগত পরিবর্তনটি আপাতত কিয়ার স্টারমারের গদি বাঁচিয়ে দিয়েছে এবং কনজারভেটিভরা যতটা কঠোর হওয়ার সাহস করেছিল, লেবার তার চেয়েও বেশি কঠোর হতে পারে—এটা প্রমাণ করে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের রিফর্ম ইউকে’র দিকে ঝুঁকে পড়া রোধ করেছে।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

হাউজ অব কমন্সের টি-রুমগুলোতে হতাশার পরিবেশ এখন শান্ত বিস্ময়ে রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের জনপ্রিয়তা যখন তলানিতে পৌঁছেছে, সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে তার নেট স্কোর মাইনাস ৫৪-তে নেমে গেছে—তখন শাবানা মাহমুদ নিজেকে দক্ষ এবং অটল বিকল্প হিসেবে নীরবে প্রতিষ্ঠিত করছেন। তিনিই বর্তমানে একমাত্র ক্যাবিনেট মন্ত্রী, যিনি এমন ফলাফল দিচ্ছেন, যা ভোটাররা খুঁজছেন।

শাবানা রাজনীতির দাবার বোর্ডে এক চতুর চাল চালছেন। হোম অফিসের মতো কঠিন দায়িত্ব (যাকে বিষাক্ত পানপাত্র বলা হয়) গ্রহণ করে এবং অন্যরা যেখানে কেবল অজুহাত দেখিয়েছে, সেখানে দৃশ্যমান কঠোরতা প্রয়োগ করে, তিনি প্রমাণ করছেন যে শীর্ষ পদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তার আছে।

লেবার পার্টির অন্দরে গুঞ্জন বাড়ছে যে যদি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে স্টারমারকে সরে দাঁড়াতে হয়, তবে ওয়েস স্ট্রিটিং বা র‍্যাচেল রিভসের চেয়ে শাবানা মাহমুদের অবস্থান এখন শক্তিশালী। তিনি একটি অনন্য রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করছেন। কাশ্মিরি বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে তিনি অভিবাসনের ওপর এমন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেন যা কোনও শ্বেতাঙ্গ পুরুষ রাজনীতিবিদ প্রস্তাব করলে সাথে সাথে ‘বর্ণবাদী’ বলে অভিহিত হতো। তিনি রিফর্ম ইউকে’র নীতিগুলো নিজের করে নিয়ে তাদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন, যার ফলে নাইজেল ফারাজের নড়াচড়া করার সুযোগ কমে গেছে। তার পাঁচ জন পূর্বসূরি যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে তিনি যদি সফল হন, তবে ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ তার জন্য খুলে যেতে পারে।

ফারাজকেও ছাড়িয়ে ডানপন্থা

তবে, শাবানার এই দ্রুত উত্থানের জন্য চড়া নৈতিক মূল্য দিতে হচ্ছে, যা লেবার পার্টির আদর্শে ফাটল ধরিয়েছে। রিফিউজি কাউন্সিল এবং এডমন্টনের বিশপ ড. অ্যান্ডারসন জেরেমিয়াহ তার প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।

শরণার্থীদের স্থিতিশীলতা কেড়ে নিয়ে এবং প্রতি কয়েক বছর পর পর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার হুমকির মাধ্যমে, সমালোচকরা যুক্তি দিচ্ছেন যে তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছেন। আশ্রয় প্রার্থীদের সহায়তা ‘বিবেচনামূলক’ বা ঐচ্ছিক করার সিদ্ধান্ত—যার অর্থ সরকার চাইলে কাজ করতে সক্ষম এমন ব্যক্তিদের আবাসন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে—তা অভিবাসন আইনজীবীদের দ্বারা ‘ডিস্টোপিয়ান’ বা দুঃস্বপ্নের মতো বলে অভিহিত হয়েছে।

তবু সবাইকে অবাক করে দিয়ে হাউজ অব কমন্সে দাঁড়িয়ে শাবানা নিজ দলের এমপিদের সতর্ক করেছেন যে অশুভ শক্তিগুলো অভিবাসন সংকটকে পুঁজি করছে, এবং তার এই দমন-পীড়নকে তিনি অতি-ডানপন্থিদের ক্ষমতা দখল রোধ করার একমাত্র উপায় হিসেবে ন্যায্য প্রমাণ করেছেন। প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি রিফর্ম ইউকে’র থেকে প্রায় অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন, এমনকি নাইজেল ফারাজ নিজেও বিরল প্রশংসা করে বলেছেন যে শাবানা তার দলের জন্যই অডিশন দিচ্ছেন।

অভিবাসীর কন্যাই কি বন্ধ করছেন দরজা?

শাবানার পারিবারিক ইতিহাসও এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮০ সালে বার্মিংহামে জন্মগ্রহণকারী এবং আজাদ কাশ্মিরের মিরপুর থেকে আসা পিতামাতার সন্তান শাবানা মাহমুদ সেই বহু সংস্কৃতিবাদেরই ফসল, যাকে তিনি এখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তার বাবা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, শৈশবে পরিবার নিয়ে পাঁচ বছর সৌদি আরবে ছিলেন—এই অভিজ্ঞতাকে তিনি কঠোর শাসন ও আইনের শাসন সম্পর্কে তার বোঝাপড়ার ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্রিটেনে তিনি গ্রামার স্কুল এবং অবশেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং রাজনীতিতে প্রবেশের আগে ব্যারিস্টার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েন। তিনি সবসময় তার ব্যক্তিগত জীবন কঠোরভাবে আলাদা রাখেন।

শাবানার সমর্থকদের যুক্তি, অন্যদের তুলনায় এই ভেঙে পড়া ব্যবস্থাকে ঠিক করার নৈতিক অধিকার তার রয়েছে। তিনি প্রায়শই ১৯৬০-এর দশকে তার পিতামাতার বৈধভাবে ব্রিটেনে প্রবেশের কথা উল্লেখ করেন, যা দিয়ে তিনি ‘বৈধ’ অবদান এবং ‘অবৈধ’ অপব্যবহারের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য তৈরি করেন। চলতি সপ্তাহে এমপিদের তিনি বলেছেন, আশ্রয় একটি বিশেষ সুবিধা, অধিকার নয়।

আপাতত পরিকল্পনাটি কাজ করছে। লেবার সরকারের তাৎক্ষণিক পতন ঠেকানো গেছে। কিন্তু যখন নতুন ‘ডেনমার্ক প্রটোকল’-এর অধীনে প্রথম ডিপোর্টেশন ফ্লাইটগুলো উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, শাবানা মাহমুদ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কেবল সীমারেখা ধরে রাখছেন না, বরং সব নতুন করে আঁকছেন। #

এইরকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর

ব্রেকিং নিউজ
বাড়িতেই বানান রেস্টুরেন্ট-স্টাইলের চিকেন সাসলিক ভিয়েতনামে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা: নতুন বাণিজ্য রুট খুঁজছে আফগানিস্তান দুবাই এয়ার শোতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলটের মৃত্যু শাবানা মাহমুদ কি হতে চলেছেন ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী? রাজশাহী নগরীতে নিজ শয়ন কক্ষ থেকে এক ব্যক্তির পঁচা লাশ উদ্ধার ভৃমিকম্পে রাবির শেরে বাংলা হল হেলে পড়ার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও নিরাপত্তার দাবি ইসলামপুরে পোল্ট্রি খামারীদের লোকসানের ধাক্কা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়! সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত আলাপ জাপানে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১৭০টিরও বেশি ভবন ধ্বংস