শান্তি-নিরাপত্তা বজায়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ রোল মডেল

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: শান্তি ও নিরাপত্তা বজায়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তা বজায়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে রোল মডেল। এ অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর চৌকস, পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের অবদান ও আত্মত্যাগ।’
আজ সোমবার (২৯ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য এবং মিশনে আহতদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অপশক্তিগুলোর নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যেন বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলগুলোতে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য আমরা তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামাদিসহ পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টগুলোতে অত্যাধুনিক মাইন-রেজিস্ট্যান্ট এ্যাম্বুশ প্রটেক্টেড যানবাহন এবং শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব।’
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে সরকার বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাত হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এ সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে ৫৭২ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষী। আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ১৪টি জাতিসংঘ মিশন ও কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এ সকল মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০টি, নৌবাহিনীর ২টি, বিমান বাহিনীর ৪টি ও বাংলাদেশ পুলিশের ৩টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে।’
শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের কারণে ওইসব দেশের জনগণ আপনাদের অকুন্ঠ ভালোবাসা উপহার দিয়েছে। অনেক দেশ আপনাদের কাছ থেকে বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষা রপ্ত করেছে। আপনারা অন্যান্য দেশের সহযোগী শান্তিরক্ষীদেরও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করছেন। করোনা মহামারির মধ্যেও শান্তি স্থাপনে আপনাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠা প্রশংসিত হয়েছে। সর্বোপরি, আপনারা বিশ্ব শান্তিরক্ষায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Peace Begins with Me’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করি। এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাতির পিতার দেখানো পথে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাব এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দেব— আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.