লেবানন’র নতুন প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা আদিব

ছবি: সংগৃহীত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লেবাননের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় কূটনৈতিক মোস্তাফা আদিব। দেশটির সংসদ সদস্যদের ভোটে তিনি আজ সোমবার (৩১ আগস্ট) নির্বাচিত হন।

তিনি ১২০ জন সাংসদের মধ্যে ৯০ জনের সমর্থন লাভ করেন। মোস্তাফা আদিব দ্রুত লেবাননে একটি নতুন সরকার গঠনে কাজ করবেন। নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

লেবাননে আন্তর্জাতিক আদালনের বিচারক নাওয়ার সালাম পেয়েছেন ১৪ ভোট। অন্তত ১২ জন সদস্য ভোট দানে বিরত ছিলেন। অন্যান্য প্রার্থী পেয়েছেন ৭ ভোট। নির্বাচিত হওয়ার পর আদিব লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন-এর সঙ্গে দেখা করেছেন।

এর আগে লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের একটি দল আলোচনা করে রোববার মুস্তাফা আবিদকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোটাভুটির জন্য মনোনীত করেন। তাঁদের বক্তব্য, আবিদ দ্রুত ক্ষমতা গ্রহণ করে, নতুন মন্ত্রিসভা তৈরী করে বৈরুতের সংস্কার কাজে হাত দেবে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে মোস্তাফা আদিব বলেন, ‘এখন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া বা মুখরোচক কথা বলার সময় নয়। এখন কাজ করার সময়। লেবাননকে পুনঃগঠন ও জনগণকে বাসযোগ্য পরিবেশ দেয়ার জন্য আমাদের হাতে সময় খুব অল্প।’

তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা দ্রুত বিধ্বস্ত লেবানন পুনঃগঠনে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা পাব। একই সঙ্গে একটি দেশপ্রেমিক সরকার গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব।’

তবে, মোস্তাফা আদিবের সঙ্গে তার আগের প্রধানমন্ত্রীর হাচান দিয়াবের ক্ষমতাগ্রহণের সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে। তিনিও সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দায়িত্ব পান। এবং সরকার গঠনের সময় দেশটির খুব কম মানুষই তাদের চেনেন।

লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের যে গোষ্ঠী মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন, দেশটির রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব সর্বাধিক। সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত এই গোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশী সাংসদ সদস্য রয়েছে দেশটিতে। ওই সাংসদরাই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। এ ছাড়াও শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে।

মোস্তাফা আদিব ২০১৩ সাল থেকে জার্মানিতে লেবাননের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি অন্তত ২০ বছর লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি’র উপদেষ্টা ছিলেন। তাই তিনি দীর্ঘ সময় ধরে লেবাননের রাজনীতি খুব কাছ থেকে দেখছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে লেবাননের সংসদ নির্বাচনে ইরান সমর্থিত শিয়া রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও এর মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো অর্ধেকেরও বেশী আসনে জয়ী হয়। তখন হিজবুল্লাহ খ্রিষ্টান রাজনৈতিক দলের নেতা মিশেল আউনকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করে।

নয় বছর পর দেশটিতে ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে রাজনীতির টেবিলেও শক্তিশালি হয়ে উঠে হিজবুল্লাহ। তবে এবার হিজবুল্লাহ সমর্থিত জোটের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ হয়েছে। এর জেরে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তবে দেশটির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল সুন্নি মতাদর্শের।

হিজবুল্লাহর মিত্র পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার নাবিহ বেররির নেতৃত্বাধীন শিয়া আমল মুভমেন্ট, দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের নেতৃত্বাধীন দ্য খ্রিস্টিয়ান ফ্রি প্যাট্রোয়েটিক মুভমেন্ট ও অন্যান্যরা হিজবুল্লাহর অস্ত্রকে লেবাননের জন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে।

১৯৭৫-৯০ পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের পর লেবাননে ১৫ বছর ধরে চলা সিরিয়ার আধিপত্যের বছরগুলোতে হিজবুল্লাহ সমর্থিত অবসরপ্রাপ্ত শিয়া জেনারেল ও লেবাননের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান জামাল আল সায়ীদ দেশটির অন্যতম সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির বাবা রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ডের পর ২০০৫ সালে লেবানন থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নেয় সিরিয়া।

কিছু দিন আগে বৈরুত বন্দরের একটি গুদামে বিস্ফোরণের পর কার্যত গোটা শহরটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। ২শ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আহতের মধ্যে কিছু দিন পর পরেই কারো কারো মৃত্যুর খবর আসছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে।

হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধী বিক্ষভে উত্তাল হয়ে ওঠে বৈরুতসহ গোটা লেবানন। বৈরুতের রাজনৈতিক অলিন্দে শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

লেবাননের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভয়াবহ। করোনার আগে থেকেই দেশের জনগণ অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছে। করোনা-কালেও দেশে একই কারণে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তারই মধ্যে বৈরুত বিস্ফোরণ অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে।

রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও নানা অশান্তি রয়েছে। সীমান্তেও ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী পক্ষে কাজ করা খুব সহজ হবে না।

তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইউরোপের বৃহৎ শক্তি, ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্সের আধিপত্যকে মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে মুস্তাফাকে। তবে কেউ কেউ মনে করেন মোস্তাফা আদিব ফ্রান্সের ইশারাতেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.