লালমনিরহাট জেলাজুড়ে চোরের উৎপাত, রেহাই পায় না মসজিদ-কবরস্থানও

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: প্রতিনিয়ত চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা। প্রতি রাতেই জেলা শহর থেকে উপজেলা শহর আর গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও যেন স্বস্তি নেই চোরের আতংকে। ঘরে, দোকানে, মসজিদে, কবরস্থানের দান পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না চোরের হাত থেকে। গ্রামেগঞ্জে গরু চুরি কিংবা শহরের বাসাবাড়ির তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
লাগামহীন এসব চুরির ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। থানায় অভিযোগ করেও অধিকাংশ সময়ে মিলছে না কোনো প্রতিকার। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ শরণাপন্ন হচ্ছেন গণমাধ্যমের, এমনকি চোরচক্রকে ধরার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনাও রয়েছে। চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ খোদ প্রশাসনও। সচেতন মানুষ এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন, এমন চুরির ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলে দাবী তাঁদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহর ও গ্রাম-গঞ্জে চোরের উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, সোলার স্ট্রীট লাইট, গরুসহ  চুরির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন অফিস আদালত ও বাসা বাড়ির টিউবয়েলের মাথা, বৈদ্যুতিক তার, সাইনবোর্ড, মোটরসাইকেলের হেলমেট। বেশ কিছু চক্র পুরো জেলাজুড়ে গত কয়েক মাস যাবত দেদারসে চুরি করছে এসব মালামাল।
লালমনিরহাট জেলা শহরের একটি বাড়ি থেকে চুরি হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার এবং এর সঙ্গে পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান। ৪ ফেব্রুয়ারি শহরের আদর্শপাড়ায় আবদুস সোবহানের বাড়িতে জানালার গ্রিল ভেঙে চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনজনের নামে একটি চুরির মামলা করেন আবদুস সোবহান।
লালমনিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিসমত আলী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চুরির ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, বাড়িতে বাড়িতে চোরের আতংক। তিনি জানান, ডায়াবেটিস হাসপাতাল মোড়ের জরিনা বেগমের পানির পাম্প, তাঁর প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে অটোরিকশার ব্যাটারী চুরিসহ বেশ কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে গত কয়েকদিনে।
একই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ জানান, বিডিআর রোডের বাইসাইকেলের শোরুমে চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেয়ার পরেও মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া অধিকাংশ বাসাবাড়ির বিদ্যুতের মেইন লাইনের সংযোগের তার চুরি হচ্ছে হরহামেশাই।
পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন জানান, কেন্দ্রীয় কবরস্থানের দুইবার দানবাক্স চুরি হয়েছে। সবুজপাড়া মসজিদের দানবাক্স এবং আরও একটি মসজিদের সিলিং ফ্যান, পৌরসভার পানির মিটারও চুরি হচ্ছে। খোর্দ্দসাপটানা, আদর্শপাড়ায় বাসাবাড়ি চুরি হয়েছে। এছাড়াও প্রায়দিন চুরির খবর আসছে।
তিনি বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা গত রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চোরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে টহল বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
এদিকে আদিতমারী উপজেলার চোরের উৎপাতের বিষয়ে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ উন নবী জানান, গত এক মাসে গরু, মসজিদের মালামাল, একটি মার্কেটের দোকান চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাঁর দাবী সবগুলো চুরির ঘটনাতেই পুলিশ সংশ্লিষ্টদের ধরতে পেরেছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তিনটি বাড়ি থেকে চারটি গরু চুরি এবং বাসাবাড়ি চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জয়ন্ত কুমার সাহা চুরির অভিযোগ অনেক আসে স্বীকার করে বলেন, অতিসম্প্রতি দুইটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে, যার একটি ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের দাবী, তাঁর থানায় কেউ চুরির অভিযোগ করেনি, চুরির ঘটনা তাঁর থানা এলাকায় নেই।
পুলিশ স্বীকার না করলেও স্থানীয় অনেকের দাবি, হরহামেশাই ঘটছে চুরির ঘটনা। গ্রামঞ্চলে বাড়ি থেকে গরু চুরি, শহর এলাকায় দোকান, বাসা কিংবা মসজিদেও অহরহ ঘটছে চুরির ঘটনা।
জেলাজুড়ে চোরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, “জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে চোর সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে আমরা ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছি। বাকিদের ধরার ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে।”
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.