লালমনিরহাটে ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: হঠাৎ পানি বাড়া কমার খেলায় মত্ত তিস্তা নদী। সকালে বাড়লে বিকেলে কমতে শুরু করে এ নদীর পানি। শুষ্ক মৌসুমেও এ নদীতে দেখা দেয় ভাঙন। বিলীন হয় বসতভিটা, কবরস্থান, ঝারবাগানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর দিকে তিস্তা নদীর ভাঙন দেখা না দিলেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙতে শুরু করেছে নদীর তীর। এখন পর্যন্ত খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ২০টি বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী ২৪ ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
সোমবার (১ আগস্ট) থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পায়। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকালে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকা। কিন্তু বিকেল ৩টার দিকে নদীর পানি  ১০ আর সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
মঙ্গলবারও (২ আগস্ট) নদীর পানি বাড়া কমা অব্যাহত থাকে। ওই দিন বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি।
নদীপাড়ের বাসিন্দা শাহ আলম (৭৫) বলেন, ‘আমার বাড়ি নদী থেকে ৪০০ মিটার দূরে ছিলো। নদী এখন  ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির পাশে চলে এসেছে। রোজদিন ব্যারেজের পানি ছেড়ে দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারা আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না।অল্প কিছু বস্তা ফেলে গেছে হাফ কিলো দূরে। আর কোনো খোঁজ নাই তাদের।’
ষাট বছর বয়সী আবেদা বেওয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘কোন্টে  পাইস (কোথায় পাও) ভাত, কোন্টে পান (কোথায় পান) ভাত। চাউলের বস্তা আনি (আমি) খাচনো (খাচ্ছিলাম),তাও ফির আইজ (আজকে) নাই। সোক (সবকিছু) তো হামার (আমাদের) ভাঙি গেইছে। আটনওবার ভাঙনো (৮ থেকে ৯ বার নদী ভাঙনে)। এল্যা (এখন) মাইনসের (মানুষের) জমিত আছি।’
আশরাফ আলী, শরিফুল ইসলাম, আবু কালামসহ অনেকের পরিস্থিতিও প্রায় একই রবম। তারা বলেন, ‘পদ্মা সেতু হলো নিজের টাকায়। তিস্তা বাঁধটাও হওয়া দরকার। হাজার হাজার মানুষ চোখের পানি ফেলছে। এ পরিস্থিতি থেকে সবাই মুক্তি চাই।’
কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মাস্টার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড প্লাবিত। দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি। শৌলমারি চরের তিনটি ওয়ার্ডের এমন কোনো বাড়ি নেই,যেখানে পানি ওঠেনি। নদীর পানি আর সমতল এক হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ত্রান পৌঁছায়নি। সরেজমিন ঘুরে এসে ইএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জাসান মণ্ডল বাদল বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সতি নদীর পাঁচটি ও তিস্তার ৯টি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। আমার ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি। মেম্বারদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে।‘
এছাড়া সদর উপজেলার কুলাঘাট, মোগলহাট, চর গোকুন্ডা। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী। কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা, রুদ্রেশ্বর তুষভান্ডার, ভোটমারী। হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, বরখাতা, সানিয়াজান,গড্ডিমারি ইউনিয়নের মানুষরাও পানিবন্দি রয়েছেন বলে এসব ইউপি’র চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘খুনিয়াগাছে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ উপজেলায় ৩ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.