লালমনিরহাটে ধরলা নদীতে বাঁধ নির্মাণের নামে চলছে হরিলুট

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে ধরলা নদীতে বাঁধ নির্মাণের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলছে কোটি কোটি টাকার খেলা। কাজের নামে প্রকল্প তৈরী করে সরকারের টাকা তারা আনে আর ভাগাভাগি করে খায়। ধরলা নদীর কাজ মানেই যেনো হরিলুটের প্রকল্প। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমরা। বার বার বসত বাড়ি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছি, আবার পানি সরে গেলে ফিরে আসছি। ধরলার বাঁধ নির্মাণের নামে এই কাজ হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। এ ভাবে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের রবিউল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন।

দুই বছরে বন্যা আর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ধরলা নদীর পাড়ের লালমনিরহাট সদর উপজেলার ইটাপোতা বনগ্রাম। এতে ফসলি জমি হারান অনেকেই। কেউ কেউ গৃহহীন হয়ে পড়েন। এসব থেকে রেহাই পেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইটাপোতা ও বনগ্রাম এলাকায় ধরলার ডান তীরে এক হাজার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ নির্মাণে প্রকল্পিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৮.৭৪ লাখ টাকা। এ বাঁধের কিছু অংশ মাটির কাজ হলেও বাকি অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধটি নির্মাণের কাজ নেয় বেলাল কনস্ট্রাশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন অজুহাতে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩১ তারিখে শেষ করার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজ মাত্র ৭০ শতাংশ শেষ করতে পেরেছে তারা। এরই মধ্যে নদীর পাড় খুড়ে বালু তুলে ২৫ হাজার দুইশত জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি রয়েছে জিও ব্যাগ বসানোর কাজ। এ দিকে ওই প্রকল্পের আওতায় ওই বাঁধ থেকে ওয়াব্দা বাজার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি প্রশস্থ করনে মাটি ভরাটের কাজ দেয়া হয়।

সেখানে বাঁধটির প্রস্থ ৪.৩ মিটার দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রের পূর্বের বাঁধটির উপর কিছু বালু ফেলে দায়সারা গোছের কাজ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করছেন অনেকেই। এ জন্য নদীর কিনারেই বসানো হয়েছে দুইটি বোমা মেশিন।ফলে বর্ষা শুরু হলেই আবারো ভয়াবহ ভাঙনের আতংকে রয়েছেন নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।

ধরলা পাড়ের বাসিন্দরা বিটিসি নিউজকে জানান, গত বছরে নদীর ভাঙনে চোখের সামনে অনেকের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় আবারও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা না আসতেই ভাঙতে শুরু করেছে নদীর পাড়। বোমা মেশিন পাড় থেকে না সরালে এ বাঁধ দিয়ে কোনো উপকারে আসবে না বলেও দাবি করেন তারা।

এ কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, নদীর কিনার থেকে বোমা মেশিন সরিয়ে নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় বসাতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তাকে নিষেধ করার পরও ঠিকাদার এমনটি করেছে। এর পরেও তিনি মেশিন না সরালে কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে রহমান বলেন বিটিসি নিউজকে জানান, মাটি না পাওয়ার কারণে পুরাতন বাঁধটির মাঝের অংশ কেটে নিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে এবং কেটে নেয়া মাটি পরবর্তীতে বাঁধের উপরে দেয়া হবে। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তার জানা নেই। বোমা মেশিন বসানোর সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট  প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.