লালমনিরহাটে কমলা চাষে সাড়া ফেলেছেন শিক্ষক দম্পতি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় কমলা। শীতের মৃদু বাতাসে দুলছে। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার এক শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে। শিক্ষকতার পাশাপাশি কমলা চাষে সাড়া ফেলেছেন তারা।
উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার শিক্ষক দম্পতি সমতল ভূমিতে চায়না, নাগপুরি ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন। বেশির ভাগ কমলা পেকে হলুদ হয়ে গেছে। আবার বেশকিছু রয়েছে সবুজ। চায়না কমলার আকার ছোট হলেও সুস্বাদু ও মিষ্টি। কমলা চাষে তাদের সফলতা জেলাজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার।
শিক্ষক দম্পত্তির কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কিনতে আসছেন বিভিন্ন জাতের কমলার চারা, আবার কেউ নিচ্ছেন পরামর্শ।
স্বামী খলিলুর রহমান উপজেলার মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার পশ্চিম সারডুবি গ্রামের পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ওই শিক্ষক দম্পতি শুরু করেন বিভিন্ন গাছের নার্সারি। এরপর ২০১১ সালে এক বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চারা ও ৮০ শতাংশ জমিতে করেন বাগান। ২০১৫ সালে বাগানে প্রথম কমলা ধরে। কয়েক বছর থেকে ১৫২টি গাছে ব্যাপকহারে ফল আসা শুরু হয়েছে। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে পান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন মজুমদার। এরপর থেকে ওই শিক্ষক দম্পতির আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির আশপাশসহ প্রায় এক একর জমিতে শুরু করেন বিভিন্ন জাতের কমলা চাষ। বর্তমানে তাদের বাগানে চায়না কমলার ১০০ শতটি গাছে থোকায় থোকায় কমলা ধরছে। পাশাপাশি বিক্রি করছেন বিভিন্ন জাতের কমলার চারা। কমলার চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কমলার চারা গাছের একটি সমৃদ্ধ নার্সারি গড়ে তুলেছেন তারা। নার্সারি ও কমলার বাগান থেকে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন ওই শিক্ষক দম্পতি।
শিক্ষক খলিলুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ১৯৯৫ সালে আমরা প্রথম নার্সারি তৈরি করি। পাশাপাশি আমার স্ত্রী ফাতেমা মজুমদার ২০১১ সালে দার্জিলিং জাতের কমলা বাড়িতে লাগায়। এরপর আমাদের কমলার বাগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধুর জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান আমার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার। এরপর থেকে আমার স্ত্রীর কমলা চাষের আগ্রহ বেড়ে যায়। চায়না চাতের কম বাটি লাভজনক ও সুস্বাদু। ফাতেমা খাতুন মজুমদার নামে কমলা বাগানটি থেকে আমরা ব্যাপকভাবে পরিচিত লাভের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি।
স্থানীয় আব্বাস আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, সমতল জমিতে কমলা চাষ করেছেন শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন মজুমদার। দার্জিলিং জাতের কমলা আর চায়না কমলা তার বাগানে ব্যাপকভাবে ধরেছে। তাদের কমলা বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন।
ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, দেশের মাটিতে কমলা চাষ হচ্ছে এটা অবাক করা বিষয়। কমলা বাগানের প্রতিটি গাছে কমলা ধরেছে। দেখতে সুন্দর ও খেতেও মিষ্টি।
ফাতেমা খাতুন মজুমদার বিটিসি নিউজকে বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিতে জড়িয়ে পড়েছি। আমাদের কৃষি অনেক ভালো লাগে। ২০১১ সালে কমলা বাগানের পর কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছি। সে থেকে কমলা চাষের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মাছ চাষ, গাভি পালন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষিকাজ করে সময় পার করছি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, নিজ উদ্যাগে কমলা চাষ করছে জেলার অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক সফল হয়েছে। তার মধ্যে ফাতেমা খাতুন মজুমদার কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষেরও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.