লালমনিরহাটের ৬৩ চরে নেই ঈদের আনন্দ!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ঈদের কথা বলতেই বেশ জোরেশোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বলছেন, জীবনই তো বাঁচে না আর ঈদ। হামার তো ঈদ নাই বাহে। বাড়ি-ভিটারসহ ৫ বিঘা জমি ছিল সম্বল। তাও নদীর ভাঙনে শেষ। এখন নদীত বাড়ি ভিটে হারিয়ে এই বাঁধে আশ্রায় নিয়া আছি এভাবে কথা গুলো বলছিলেন, তিস্তা পাড়ের বাঘের চরের বৃদ্ধা প্রতিবন্ধী লাইলী বেগম (৬০)।
অসহায় ওই বৃদ্ধার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের বাঘের চর গ্রামে। তিস্তা নদীতে সব হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধেঁর রাস্তায় আশ্রায় নিয়ে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে বাস করছেন প্রতিবন্ধী লাইলী বেগম । এক সময়  ১ ছেলে ২ মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল।
একদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদকে ঘিরে সবার মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও লালমনিরহাটের ৬৩টি চরের বন্যাদুর্গত জনপদে নেই ঈদ আনন্দ। বরং ত্রাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। প্রতিবছরের বন্যায় এ চরাঞ্চলের মানুষ গুলো বন্যার পানিতে যে ভাবে ভাসমান জীবন যাপন করেন, অপর দিকে ঠিক তেমনিভাবে ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বাস্তুহীন হয়ে পড়ে। এ সকল পরিস্থতির কারনে তাদের কাছে ঈদ যেন এক দিকে নিরানন্দ, অন্য দিকে হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ চরাঞ্চলের মানুষের চির দিনের নিত্য সঙ্গি। বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উচু স্থানে। আশ্রয় কেন্দ্রের সল্পতার কারনে অনেকে খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের সায়েদ আলী তিস্তা গর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়েছের কিছু দিন আগে। এখন অন্যর জমিতে টিনের চালে পেতে পরিবার নিয়ে বাস করছেন। তাকে ঈদের কথা বলতেই  ডুকরে কেঁদে উঠে, বলতে গিয়ে আর বলে উঠতে পরেনি।
এ রকম হাজারো মানুষ আছে হয়তো এভাবেই দুঃখ -কষ্ট কে বুকে আগলে ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন। চর বাসিরা ঈদ আনন্দ বুঝলেও পারেনা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় তিস্তার ভাঙ্গের শিকার হয়ে বাঁধের রাস্তায় কেউবা অন্যর জমিতে টিনের চালা করে পরিবার নিয়ে কোন মতেই বাস করছেন। চরে গুলোতে চলছে শুধুই হা হা কার। চরবাসীর মানুষের মুখে ঈদের আনন্দ বদলে বিষদের ছাপ। তিস্তা ও ধরলা ভয়াভহ ভাঙনে জেলার ৫ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার ভিটে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে লালমনিরহাট সদরের চর গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার বাহাদুরপাড়া, চন্ডিমারী, কুটিরপাড়, কালীগঞ্জের আমিনগঞ্জ, চর বৈরাতী, হাতীবান্ধার সিংগীমারী, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ফকিরপাড়া, সানিয়াজানের বাঘের চর, নিজ শেখ সুন্দর ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে আদিতমারীর কুটিরপাড়া ও বাহাদুরপাড়া গ্রামের বালুর বাঁধ।
হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত সরকারের জিআর হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ১ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।  এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ঈদের কোনো আমেজ নেই।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সরকারের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ফলে কোনো প্রকার মানবিক বিপর্যয় ঘটেনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে গৃহনির্মাণনে জন্য প্রতি পরিবার ৭ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.