লকডাউন শিথিল হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: টানা ১৪ দিন কঠোর লকডাউনের পর সরকারঘোষিতভাবে শিথিল হওয়ার সাথে সাথেই কুড়িগ্রামে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলছেন সাধারণ ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ জকল স্তরের জনসাধারণ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে লকডাউন খুলে দেয়ার প্রথমদিনেই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। সামনে কোরবানীর ঈদকে ঘিরে মাকেটে পর্যাপ্ত ভিড় হওয়ার কথা থাকলেও তেমন ভীড় লক্ষ্য করা যায়নি এ দিন। তবে কিছু কিছু শপিংমল কীংবা দোকানে দেখা গেছে মানুষের ভীড়। এসব মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে এখনও উদাসীন ক্রেতা জনসাধারণ। অধিকাংশ ক্রেতার মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।
সামাজিক দূরত না মেনে ভিড় পাকিয়ে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে কিছু দোকানে। আবার অনেক দোকানে দেখা গেছে মাস্ক পরিধান করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। তবে মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করলে করোনার প্রকট বাড়তে পাড়ে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলেছেন তারা। মাস্ক পরে দোকানে আসার তাগাদাও দিচ্ছেন বারবার। দীর্ঘদিন পর দোকান খুলতে পেরে খুশি দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। এদিকে মার্কেটে আসা ক্রেতারাও খুশি কেনাকাটা করতে পেরে।
কাজী মার্কেটের এসএস গার্মেন্টস এ দেখা গেছে সামাজিক দূরত্ব রেখেই ক্রেতাদের বসার টুল রেখেছেন তারা। এছাড়াও ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক পরিধান করে কেনাকাটা করার পরামর্শও অব্যাহত রয়েছে তাদের।
প্রীতিলতা সুপার মার্কেটের চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের জাহিদুল ইসলাম জানায়, যে দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালায় সেই দোকান বন্ধ রেখে সংসারের খরচ চালানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। অনেক কষ্টে এ কয়দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। দোকান বন্ধ থাকায় ধারদেনাও করতে হয়েছে তাকে। তাই লকডাউন শিথিলের ঘোষনায় দোকান খুলতে পেরে অনেক খুশি তিনি।
কাজী মার্কেটের দোকান মালিক বাবু মিয়া জানায়, লকডাউনে দোকান খুলতে না পেরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন গেছে তাদের। পেটের তাগিদে দু’দিন গোপনে দোকান খুললেও ভ্রাম্যমান আদালতে দু’দিনই গুনতে হয়েছে ৫শ করে ১ হাজার টাকা জরিমানা।
বাসস্ট্যান্ডের রুপম হার্ডওয়ারের আব্দুল কাইয়ুম জানায়, তাদের রোজগারের একমাত্র মাধ্যম দোকান। দোকনের আয়েই চলে সংসার। দোকান বন্ধ থাকায় আয়ও হয়নি। তাই কুরবানী দেয়া নিয়েও আছেন সংশয়ে। লকডাউন শিথিলের প্রথমদিন উৎসাহ নিয়ে দোকান খুললেও আগের তুলনায় কমেছে বেচা-বিক্রি। কেননা এতদিন লকডাউন থাকায়, মানুষের আয় ছিলো না। তাই হাতে টাকা না থাকায় মার্কেটে ভিড়ছেন না সাধারণ মানুষ।
কেনাকাটা করতে আসা শিউলি খাতুন, আশা মণি, আজমেরি হাসান জানায়, স্কুল কলেজও বন্ধ। লকডাউনে কোথাও বের হওয়ার জো নেই। বাড়িতে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছেন তারা। তাই সামনের ঈদ উপলক্ষে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন তারা।
আব্দুল লতিফ নামের এক ব্যাক্তি জানায় তার বাড়িতে নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এবং ৫ বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। তারা মার্কেট করতে আসার জন্য ব্যাতি ব্যস্ত। কিন্তু করোনা আক্রমনের ভয়ে তাদেরকে মার্কেটে নিয়ে আসেননি তিনি। কোনোমতে তাদের বুঝিয়ে নিজেই এসেছেন কেনাকাটা করতে।
তিনি আরও জানান, আমরা অভিভাবকরা একটু সচেতন হলে ছেলে মেয়েকে ভালোকরে বোঝালেই তারা বোখেন। এভাবে পরিবারের লোকজনকে সচেতন করে মাস্ক পরিধান করে কেনাকাটা করতে এসেছেন এবং কেনাকাটা শেষে সোজা বাসায় চলে যাবেন তিনি।
নাগেশ্বরী বণিক সমিতির সভাপতি নুরন্নবী দুলাল জানায়, সরকারি বিধি নিষেধ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার ব্যাপারে আমাদের সকল ব্যবসায়ীদেরকে বলা হয়েছে। আশা রাখি সবাই স্বাস্থ্যবিধিসহ সকল নিয়ম কানুন মেনে সচেতনভাবে ব্যবসার কাজ পরিচালনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস আছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর আহমেদ মাছুম বিটিসি নিউজকে বলেন, যেহেতু সরকারিভাবে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। তাই আমরা যদি নিজ নিজ দায়িত্বে করোনা মোকাবেলায় সচেতন থাকি তবে আমরা নিজে যেমন সুরক্ষিত থাকব তেমনই সুরক্ষিত রাখতে পারব নিজ পরিবারকে আর নিজের পরিবার সুরক্ষিত থাকলে সুরক্ষা পাবে আমাদের দেশ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.