লকডাউনের মধ্যেই সুন্দরবনে দিনে-দুপুরে গাছ কেটে পাচার!

বাগেরহাট প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যেই সুন্দরবনে দিনে-দুপুরে গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। খোদ বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ। পূর্ব সুন্দরবনের ঢাংমারী ষ্টেশনের ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মোঃ আনোয়ার হোসেন খাঁন ঘাগরামারি এলাকা থেকে সুন্দরী ও কাকড়া গাছ ট্রলারযোগে পাচার করছিলেন। 

আজ বুধবার (০৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাচার কাজে ব্যবহৃত করা হয় বনবিভাগের পতাকাবাহী ট্রলার। গাছ পাচারকারী তরুণ বলেন, এ গাছ তাদের এসও আনোয়ার সাহেব ঘাগরামারী থেকে কেটে আনার অনুমতি দিয়েছেন।

তবে ঢাংমারী ষ্টেশনের এসও (ষ্টেশন কর্মকর্তা) মোঃ আনোয়ার হোসেন খাঁন দাবি করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ি থেকে এ গাছ আমাদের ষ্টেশনের (ঢাংমারী) স্থাপনা তৈরীর কাজে আনা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা রয়েছে।’ তবে বনবিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে গাছ নিয়ে আসার সময় ছিলনা কোনও বনরক্ষী, ছিল ৩ জন পাচারকারী।

এদিকে বনবিভাগের স্থাপনা তৈরীর কাজে কোন গাছ ব্যবহার করতে হলে তাদের জব্দকৃত গাছ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেনা বলে জানান পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ এনামুল হক।

ঢাংমারী ষ্টেশনের এসও আনোয়ার হোসেন খাঁনের সুন্দরবনের সদ্য গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘উনি (এসও আনোয়ার) বলেছেন তাদের ষ্টেশনের জেটি নির্মাণের জন্য নেওয়া হচ্ছিল। তবে সেটি সদ্য কাটা কিনা আমি বলতে পারব না’।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাংমারী ষ্টেশনের এসও আনোয়ার হোসেন খাঁন ও ঢাংমারী ষ্টেশনের আওতায় ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ির ওসি আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে গাছ পাচারসহ নানা রকম অভিযোগ আছে স্থানীয়দের।

ঢাংমারী ষ্টেশনের পাশের গ্রাম ভোজন খালীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান মিস্ত্রি, সাবেক ইউপি মেম্বর মোঃ আফসার আলী ও সঞ্জয় কুমার বর্মন অভিযোগ করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এসও আনোয়ার এবং ওসি আব্দুর রউফ তাদের লোক দিয়ে সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়ত সুন্দরী, কাকড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছ পাচার করে। যারা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করে তাদের বিরুদ্ধে হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন বলেও জানান তারা।

আর এসব কাজে ভোজনখালীর বাসিন্দা বাদল ও ট্রলার চালক রহিম নামে ২ জন ব্যক্তি বনকর্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিষয়টি আমি দেখতেছি বলেই ফোন কেটে দেন। এরপর তাকে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এ প্রসঙ্গে বন সংরক্ষক খুলনাঞ্চাল (সি এফ) মোঃ মঈন খাঁন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সুন্দরবন থেকে সদ্য গাছ কেটে ষ্টেশনের কোন স্থপনা তৈরী করার কোন সুযোগ নাই। দীর্ঘদিনের জব্দকৃত গাছ দিয়ে এসব স্থাপনা করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। কোনও কর্মকর্তা বনের গাছ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.