র‌্যাবের হাতে জিহাদী বইসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জেএমবি আটক

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে জিহাদীবই ও ম্যাগজিনসহ চাঁপাইনববাগঞ্জের ৩ জেএমবি সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব ৫ এর সদস্যরা। গত ২৫ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ও রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ফাজিলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃত জেএমবি সদস্যরা হচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের চাতরা গ্রামের মোঃ বিশারদ আলীর ছেলে মোঃ হারুনর রশীদ (৪৮), একই উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান (৫৬) ও শ্যামপুর ইউনিয়নের কয়লাদিয়াড় গ্রামের মোঃ সামছুদ্দিনের ছেলে মোঃ গোলাম আজম (৩৯)।

বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। র‌্যাব সুত্র জানায়, র‌্যাব-৫ রাজশাহী অনুসন্ধান ও গোয়েন্দার তথ্যের ভিত্তিতে তাদের নজরদারীর ধারাবাহিকতায় জানতে পারে যে, জেএমবি সংগঠনের কিছু সক্রিয় সদস্য ঈদ পরবর্তী সময়ে গোপন স্থানে জমায়েত ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালানোর উদ্দেশ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোন নির্জন গোপন স্থানে জমায়েত হবে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর একটি বিশেষ আভিযানিক দল সদর থানার বিভিন্ন জায়াগায় গোয়েন্দা অনুসন্ধান চালাতে থাকে। অভিযানের এক পর্যায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর এবং রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ফাজিলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিহাদী বইসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির ৩ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়। অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে ৪টি জিহাদী বই, ২টি জিহাদী ম্যাগাজিন, মোবাইল সেট, সীম কার্ড, টর্চ লাইট, গ্যাস লাইটার, মোমবাতি ও সিগারেট উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুনর রশীদ স্বীকার করে বলেন, সে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র সক্রিয় সদস্য ও এবং সংগঠনের বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। স্থানীয় সিরাজুল মুহুরীর ছেলে এমদাদ হুজুরের অনুপ্রেরণায় সে ২০০৫ সালের দিকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনে যোগদান করে। এমদাদুলের নেতৃত্বে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলীয় মিটিং, উগ্রবাদী বই বিতরণ, ইয়ানতের টাকা আদায়, জিহাদী দাওয়াত ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনা করে। মিটিংয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে নাশকতা, উগ্রবাদী বই বিতরণ এবং সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কিত নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। বর্তমানে হারুন ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন ছদ্মবেশি পেশার আড়ালে সংগঠনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, প্রচলিত ধর্মীয় রীতি-নীতিতে অনাস্থা থাকায় ২০০৩/২০০৪ সালের দিকে স্থানীয় রবিউল ইসলামের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জাকারিয়া, রহমত আলী, ওমর ফারুকসহ আরো অনেকে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) তে যোগদান করে এবং দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

সে নিয়মিত দলের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে এবং ইয়ানতের টাকা জমা দেয়। রবিউলের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম আজম জানায়, সে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। ২০১৬ সালে স্থানীয় মিজানের অনুপ্রেরণায় সে সংগঠনে যোগদান করে। সে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও মিটিংয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

এসব মিটিংয়ে প্রথমে কোরআন হাদীসের কথা বললেও পরবর্তীতে সরকার ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং সেখানে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাড়ানোর কথা বলে হিযরত করার আহবান করে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশ গোলাম আজমকে আটক উদ্দেশ্যে তার বাড়ীতে তল্লাশী করে। তারপর থেকে সে এলাকার বাইরে পালিয়ে থাকে। কিছুদিন আগে ঈদ পরবর্তী সময়ে দলীয় মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে আবারও এলাকায় ফিরে আসে। অদ্যাবধি সে গোপনে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ, জিহাদী দাওয়াতসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত রয়েছে। এঘটনার প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.