রোজার আগেই রাজশাহীর বাজার চড়া

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : শুক্রবার থেকে পবিত্র মাহে রমাজান মাস। এ মাসে মূল উদ্দেশ্য মানুষকে সংযম ও ধৈর্যশীলতা শেখানো, মানুষত্বকে বিকশিত করা। তবে প্রতি বছর এই মাস আসলে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে একটা আতঙ্ক কাজ করে। তাদের সঞ্চয় বুঝি এ মাসেই ফুরিয়ে গেল; বুঝি মাস চলবে না এই আয়ে! এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রোজার আগেই রাজশাহীর বাজারে নিত্য পন্যের বাজারে সেই আচ পাওয়া গেছে। প্রতিবারের মতো এবারও রমজান মাস আসার আগেই বাজারে নিত্য পণ্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ ঘাটতিতেই দাম বেড়ছে নিত্যপণ্যের।

মঙ্গলবার স্থানীয় বড় বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে মাংস, মসলা ও ডালের মূল্য পণ্য ভেদে প্রায় ১০ থেকে ৯০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মাংস ও আদা-রসুনের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমাসের শুরুতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিল ১১০ টাকা, সোনালী ১৮০, দেশি মুরগী ৩৫০ টাকা।

মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সোমবার (১৫ মে) বাজারগুলোতে ব্রয়লার এখন ১৪০ টাক, সোনালী ২৭০, দেশি মুরগী ৪০০, লাল লেয়ার ১৯০, সাদা লেয়ার ১৬০, হাস ২৩০ ও রাজহাস ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া গুরুর মাংস ৪৬০, মোষের মাংস ৪২০, খাসির ৭২০ ও ছাগল ৬০০টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মসলার বাজারেও একই ভাব লক্ষ করা গেছে। এলাচ ১৮টাকা শ, লবঙ্গ ১৬, গরম সমলা ৩০, গোল মরিচ ১০০, জিরা ৪০, ধনে ১৬টাকা শ দরে ও শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বোতলজাত ভোজ্য তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৫৬টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে মানভেদে ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেতে ৯০ টাকয়। অথচ দুই সপ্তাহ আগেই যার দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি। ডালের বাজারের ৭-৯টাকা করে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। মানভেদে মুসুরের ডাল ৯০ টাক, সোনা মুগ ৪০, মোটা মুগ ৯৫, বুটের ডাল ৮০ এ্যঙ্কর ৪০ টাকা কেজি।

ভাই বোন ভ্যাটাইটি স্টোরের সত্বাধিকারী জানান প্রায় পতিটি মসলাই ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডালের বাজারেও একই ভাব। পাইকারী মসলা ও ডাল বিক্রেতা টনি ট্রেডার্সের আসাদ আলী জানান প্রতি বস্তা মসলা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। ডাল কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশিতে।

তাই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এদিকে আদা ও রসুনের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি ভালো মানের আদা ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকয় আর রসুন ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

দেশি পেয়াজ ১০টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, ভারতীয় পেয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। বেগুন প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আলু ও সবজির বাজার স্বাভাবিক বলছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০, পটল ৩৫, করল্লা ৫০, ঢেরস ৩০, সজনা ৬০, পেপে ৪৫ টাকা ও লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
মাছের ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজর স্বাভাবিক।

প্রতি কেজি মাঝারি আকারের ইলিশ ৭০০ ও বড় ইলিশ ৮০০ টাক, বড় চিংড়ি ৬৫০ টাকা, বড় মিরকা ২০০, রুই ২৫০, পাঙ্গাশ ১২০, সিলভার কাপ ১৮০ ও বড় তেলাপিয়া ১৬০ টাকা কেজি। এদিকে আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করার অনুরোধ জানিয়ে রাজশাহী জেলার প্রশাসক এসএস আব্দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সাথে সতবিনিময় সভায় বলেছেন, আসন্ন রমজানে সাধারণ মানুষের ওপর আমরা যেন জুলুম না করি।

এসময় তিনি বিধিন্ন ধর্মের ও দেশের উপমা দিয়ে বলেন, বহিবিশ্বের দেশগুলোতে ধর্মিয় উৎসবে নিত্য প্রণ্যের দ্রব্যগুলোর দাম কমে; আর দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে ঈদ বা পূজায় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এতে করে সবচাইতে বেশি নি¤্ন আয়ের মানুষগুলোকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

এদিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন উপস্থিত সকলের সামনে বাজারে বর্তমান চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন উপস্থপন করেন। সেখানে জানান হয় গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহীর বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পেয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ শতাংশ, রসুন ১২৭ শতাং, মুরগী ২৭ থেকে ৮০ শতাংশ, ডিম ১৭ শতাংশ, ধনিয়া ১২ শতাংশ।

এছাড়া মাছের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। এসময় জানান হয় এই প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর বর্তমান বাজারে মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভোজ্য তেল, চিনির ও ডালের মূল্য এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা প্রশাসক অফিসের দেয়া এই অথ্যই জানান দেয় বর্তমান বাজারের অস্বাভাবিক চিত্র।

সাহেব বাজার কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসা কর্মজীবি রোজিনা আক্তার বলেন, বাজারে কোন মনিটরিং টিম নেই। থাকলে বাজার যখন তখন অস্বাভাবিক হতো না। সিটি কর্পোরেশনের টাঙান মূল্য তালিকার বোর্ডে দেখেন প্রতি কেজি আলুর দাম দেখান হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। দেশি মুরগী দেখান হয়েছে ৩৮০, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.