রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই বিরোধী জোটের মহড়া চান ভোট-কৌশলী!

(রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই বিরোধী জোটের মহড়া চান ভোট-কৌশলী!)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী জোটের মহড়া কি তা হলে শুরুই হয়ে গেল? লক্ষ্য, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন? আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা সেরকম মনে হলেও বিরোধীদের একাংশ সম্ভবত স্টেজ রিহ্যার্সালটা সেরে নিতে চাইছে সামনের বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই। অনেকের বিশ্বাস, গেম-চেঞ্জার হতে পারে এই নির্বাচনই।
আর এই মহড়ার ব্যাপারে রীতিমতো সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকে-কে। পেশাদার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে যাঁর নাম এখন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মুখে মুখে।
একক জনপ্রিয়তা, জনকল্যাণমূলক লাগাতার কর্মসূচি, অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনলেও, অনেকেরই বিশ্বাস প্রশান্ত কিশোর পরামর্শদাতার ভূমিকায় না থাকলে বিজেপিকে এমন অনায়াসেই রুখে দেওয়া সম্ভব হতো না তৃণমূলের পক্ষে।
কেন্দ্রে সেই বিজেপিকেই ক্ষমতাচ্যুত করতে এবারে আদাজল খেয়ে নেমে পরেছেন পিকে। রাজ্য ছেড়ে এবারে তাঁর আনাগোনা জাতীয় রাজনীতিতে। তবে তাঁকে এ ব্যাপারে কেউ আদৌ কোনও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন, নাকি নিজের উদ্যোগেই তিনি পথে নেমে পড়েছেন, তা কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়।
এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাটা ঠিক পেশাদার পরামর্শদাতার কিনা, সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এবারে আসলে পিকে নিজেই সক্রিয় রাজনীতিতে নামতে চলেছেন বলে জোর গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে।
কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা বঢরা গান্ধী এবং এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারের সঙ্গে তাঁর গোপন বৈঠক সম্প্রতি আরও উস্কে দিয়েছে এই জল্পনাকে। তবে মুখ খুলছেন না কেউই।
২০১৯ এ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি-র অকল্পনীয় উত্থানে ঘুম ছুটে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের। সকলকে অবাক করে দিয়ে মোট ৪২টা আসনের মধ্যে ১৮টাই জিতে নিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল পেয়েছিল ২২টা। বিপর্যয় সামাল দিতে ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে পিকে-কে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেন তৃণমূলের সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দায়িত্ব নিয়েই কিছুটা কর্পোরেট ধাঁচে তৃণমূলকে পরিচালনার চেষ্টা শুরু করেন প্রশান্ত।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমজনতার দুরত্ব ঘোচাতে ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলার গর্ব মমতা’, ‘দুয়ারে সরকার’ এর মতো কর্মসূচি ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখে। দলীয় সংগঠনকে ঢেলে সাজানো এবং বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রচারাভিযান- সবেতেই পিকে-র ব্লু প্রিন্ট অকল্পনীয় ডিভিডেন্ড দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পায়ের তলায় হারানো জমি ফিরে পেয়েছিল তৃণমূল। যদিও অনেক বিতর্কের ঝড়ও এই সময়ে সামলাতে হয়েছে প্রশান্তকে। তাঁর ‘ওয়ে অফ অ্যাকশন’এ রীতিমতো আপত্তি উঠেছিল দলের মধ্যেই।
শুধু মমতা নন, তাঁর কনসাল্ট্যান্সির জোরে অন্যান্য রাজ্যের আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাও এর আগে বিভিন্ন সময়ে ঘোরতর সঙ্কট কাটিয়ে উঠে জয়ের মুখ দেখেছিলেন নির্বাচনী যুদ্ধে। তবে এটাও ঘটনা, পিকে-র কথায় চোখ বুজে ভরসা করতে গিয়ে ভরাডুবিও হয়েছিল বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা এবং তাঁদের দলের।
তবুও বিশ্বাসযোগ্যতার সূত্রেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দলে এক সময়ে তিনি সহ সভাপতির সম্মান পেয়েছিলেন। কিন্তু এবারে পশ্চিমবঙ্গে সাফল্যের ধারা সম্ভবত কিছুটা ভিন্নমাত্রা দিয়েছে তাঁর ভাবমূর্তিকে।
লক্ষ্যণীয়, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ইতিমধ্যেই সর্বভারতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার একটা জোরদার প্রয়াস শুরু হয়েছে। বিজেপি-বিরোধী শক্তি হিসেবে অবশ্যই তিনি একটা বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট আদৌ সম্ভব কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কঠিন বাস্তব বলছে, বিভিন্ন রাজ্যভিত্তিক বা আঞ্চলিক দলের ভিন্ন মত থাকলেও তৃতীয় বা চতুর্থ বিরোধী জোটের প্রয়াস অর্থহীন।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী-শক্তি ঐক্যবদ্ধ লড়াই না চালালে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অর্থাৎ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আর এই চরম সত্যটা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই প্রশান্ত কিশোর ছুটে যাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষনেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং তাঁর সন্তানদের কাছে। গোপন বৈঠক করছেন মুখোমুখি কিংবা ভার্চুয়ালে। দেখা করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং এর সঙ্গেও।
পিকে দ্বারস্থ হয়েছেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারেরও।একবার নয়,বারবার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুধু মহারাষ্ট্রে নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও যাঁর প্রভাব প্রশ্নাতীত। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সামনের বছরেই।
সূত্রের খবর, ২০২২এ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী-জোটের পক্ষ থেকে শারদ পাওয়ারকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন পিকে। কিন্তু সাড়া দেননি পাওয়ার। কঠোর বাস্তববাদী নেতার যুক্তি, সংসদে বিজেপির শক্তি প্রায় ৩০০। অতএব, তাঁর কাছে এটা স্পষ্ট, ঠিক কী ঘটতে পারে।
আসলে স্টেজ রিহ্যার্সালটা বা চূড়ান্ত মহড়াটা সেরে নেওয়ার ব্যাপারে একটু বোধহয় বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন ভোট-কৌশলী প্রশান্ত। কিন্তু মঞ্চটাই যে এখনও বাঁধা সম্ভব হয়নি। মূল অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও তো এখনও অনিশ্চিত ! তা ছাড়া, বিরোধীদের সকলেই প্রশান্ত কিশোরকে পরিচালকের ভূমিকায় আদৌ মেনে নেবেন তো ? দেখার বিষয় সেটাও।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.