বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নতুন দফার শান্তি আলোচনার প্রস্তুতির মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাতভর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত দুজন নিহত এবং ৩২ জন আহত হয়েছেন। এই হামলাকে সামনে রেখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভে রুশ আক্রমণই প্রমাণ করে যে মস্কো শান্তি চায় না।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় যাওয়ার পথে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জেলেনস্কি এ মন্তব্য করেন। সেখানে রোববার (আজ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো ট্রাম্পের নতুন ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা।
ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠকের আগের রাতে কিয়েভে রুশ বাহিনীর টানা হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় প্রাণহানির পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়েছেন। জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তীব্র শীতের মধ্যে কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ আবাসিক ভবনের হিটিং ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ওলেক্সি কুলেবা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হামলার বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে নির্ভুল দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। মস্কোর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব স্থাপনা ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী ও সামরিক শিল্প খাতের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
টেলিগ্রামে দেওয়া আরেক বার্তায় জেলেনস্কি জানান, কিয়েভ লক্ষ্য করে প্রায় ৫০০টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তার ভাষায়, এসব হামলা জ্বালানি অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসামরিক স্থাপনাকেও লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। হামলার পর প্রকাশিত ছবিতে আবাসিক ভবনে বড় গর্ত, আগুনে জ্বলতে থাকা ঘরবাড়ির দৃশ্য দেখা গেছে।
কিয়েভে বিবিসির সাংবাদিক আনাস্তাসিয়া গ্রিবানোভার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনও হামলার শিকার হয়। বহুতল ভবনের ওপরের কয়েকটি ফ্ল্যাটে আগুন ধরে যায়। হামলার সময় তিনি ভবনের লিফটে ছিলেন, তবে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় দারনিতস্কি জেলার একটি প্রবীণ নিবাস থেকে ৬৮ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অভিযুক্ত করে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে মস্কোর কোনো সদিচ্ছা নেই। তিনি লেখেন, ‘রুশ প্রতিনিধিরা দীর্ঘ আলোচনা করছেন, কিন্তু বাস্তবে ড্যাগার ক্ষেপণাস্ত্র ও শাহেদ ড্রোনই তাদের হয়ে কথা বলছে।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও মিত্র দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাল্টা দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের আকাশে ইউক্রেনের পাঠানো প্রায় ২০০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে আটটি ড্রোন রাজধানী মস্কোর আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানানো হয়। #















