রাশিয়া জিতে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : ইউক্রেন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া জিতে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। তাই বিদেশি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) সতর্ক করেছেন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী ডেনিয়াস শ্যামিহাল।
মার্কিন কংগ্রেসকে দীর্ঘস্থায়ী সহায়তা বিল পাস করার আহ্বান জানিয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে হেরে গেলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ হবে।
সহায়তা বিল পাশে আশাবাদী হয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি পাশ করবেন মার্কিন আইন প্রণেতারা।
জানা গেছে, এই সপ্তাহেই সহায়তা প্যাকেজের ওপর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হবে। এই প্রস্তাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পাশাপাশি ইসরায়েল ইস্যুতেও ভোট হবে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শ্যামিহাল মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার বিষয়ে বলেন, আমাদের এই অর্থ গতকালের জন্য প্রয়োজন। আজ বা আগামীকালের জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে যদি রক্ষা না করি তবে ইউক্রেনের পতন হবে। এর মানে, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বিশ্বকে একটি নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে।
তা না হলে, অনেক ধরনের যুদ্ধ হবে। দিন শেষে, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধে জয়ী হয় তবে পরবর্তীতে পোল্যান্ড আক্রমণ করতে পারে। যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত করবে।
রাশিয়া একদিন পূর্ব ইউরোপে আক্রমণ করতে পারে। পশ্চিমাদের এমন দাবিকে ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা’ বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাছাড়া পশ্চিমাদের ভয় দেখানো এই দাবিকে উপহাস করেছেন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা।
রাশিয়া কখনই ন্যাটোর মধ্যে কোনও দেশ আক্রমণ করেনি। আর পোল্যান্ড হচ্ছে ন্যাটোভুক্ত দেশ। ন্যাটোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তির অর্থ হল, একজন সদস্যের ওপর আক্রমণ মানে, সকলের ওপর আক্রমণ।
রুশ দ্বারা নিজ দলের সদস্যরা প্রভাবিত হচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্যামিহালকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন রিপাবলিকান হাউসের পররাষ্ট্র বিষয়ক চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককাল।
জবাবে শ্যামিহাল বলেন, বিভ্রান্তি ও প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেকের ওপর প্রভাব ফেলছে। যেমনটা ইউক্রেনের মানুষের ওপরও পড়েছে।
কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনে সম্ভাব্য সহায়তা বন্ধ করে রেখেছে রিপাবলিকান দলের ডানপন্থি বিরোধীরা।
মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য প্রথমে তহবিল পাস না করে বিদেশে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন আইন প্রণেতাদের মধ্যে কয়েকজন।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিলটি কংগ্রেসে পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে স্বাক্ষর করবো।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র এ পশ্চিমাদের অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ইউক্রেন। কারণ তাদের প্রচুর আর্টিলারি গোলাবারুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে কয়েক মাস কংগ্রেসের অচলাবস্থা গভীর প্রভাব ফেলেছে।
গোলাবারুদের অভাব ও মনোবলের ভেঙে যাওয়ার কারণে পিছু হটতে বাধ্য করেছে ইউক্রেন। ফেব্রুয়ারিতে দখলকৃত ডোনেটস্কের নিকটবর্তী একটি শহর আভদিভকা থেকে পিছু হটেছে।
শত্রুদের জন্য ১০ থেকে এক আর্টিলারি গোলাবারুদ সুবিধার উল্লেখ করে একজন জেনারেল বলেন, কয়েক মাস যুদ্ধ করে ফিরে যাওয়াই ভালো ছিল।
অস্ত্রের কৃত্রিম ঘাটতিকে দায়ী করেছেন জেলেনস্কি। কারণ এই পরিস্থিতি এড়াতে সামরিক সহায়তার আবেদন করেছিলেন তিনি।
এদিকে, পিছু হটার কারণ উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, কিছু কংগ্রেসম্যানের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এমন হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে আভদিভকার ক্ষতি বেশি হয়েছে। উভয়কেই বিশাল আর্টিলারি হামলায় পরাস্ত করেছে রুশ বাহিনী।
যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ফোর্সেস কমান্ডের সাবেক কমান্ডার জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারনস সম্প্রতি বলেন, ইউক্রেনকে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ না দেওয়া হলে, এই বছর পরাজয়ের মুখোমুখি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা রাশিয়াকে সামনের সারিতে যুদ্ধ করতে দেখছি।
ইউক্রেন যখন বুঝতে পারবে, তারা জিততে পারে না। তখন মানুষ কেন লড়াই করে মরতে যাবে?
যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান হতাহতের কারণে রাশিয়ার বিপরীতে ইউক্রেনে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। সরকার এই মাসের শুরুতে, কয়েক হাজার নতুন নিয়োগ দিয়েছে। যাতে নিয়োগের বয়স ২৭ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ২০২২ সাল থেকে ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, কমপক্ষে ৭০ হাজার সেনা মারা গেছেন। আর অনেকেই আহত হয়েছেন।
বিবিসির এক তদন্তে দেখা গেছে, অন্তত ৫০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার সেনা আহত হয়েছেন।
শিল্পকে যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছে রাশিয়া। ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের জন্য চুক্তি করার সময় জাতীয় বাজেটের ৪০ শতাংশ ব্যয় করেছে দেশটি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.