রাবি শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনতার কাছে জিম্মি

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়তে আসা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগকেই থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেস গুলোতে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেস এবং বাসার মালিকদের বেপরোয়া সিট ভাড়া বাড়ানো , খাবারের চড়া মূল্য , অগ্রিম ভাড়া আদায়, বিভিন্ন অন্যায় নিয়ম, স্থানীয় মাতাল যুবকদের অত্যাচার, দোকানীদের চরম বাজে আচরণ ইত্যাদি সমস্যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের কছে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের মুখে শুনতে পেলেও সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেয় না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনতার কাছে জিম্মি হয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পায় মাত্র সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। বাকি শিক্ষার্থীদের জায়গা করে নিতে হয় আশেপাশের মেস, হোস্টেল অথবা বাসায়।

শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার এই সুযোগ বিন্দুমাত্রও হাতছাড়া করে না স্থানীয় মেস মালিক, দোকানদার, নেতা এবং মাতাল যুবকেরা। অবৈধ ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ভাড়া বৃদ্ধি, অগ্রিম টাকা আদায়ের পর হয়রানি, তিন মাস অতিবাহিত না হলে মেস না ছাড়ার হুমকিসহ বিভিন্ন অন্যায় নিয়ম বাস্তবায়ন করে মেস মালিকেরা।

তাছাড়া স্থানীয় যুবকদের বিরুদ্ধে বাসায় এসে মাদক সেবন, রুমে এসে তাস খেলা, শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা, ছিনতাই এবং চাঁদাবাঁজিসহ বিস্তর অভিযোগও রয়েছে।

যুবকেরা মাদকের তাগিদে দিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের থেকে ফোন বা টাকা পয়সা কেড়ে নেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। মেস মালিক, মাতালদের পাশাপাশি বাদ যায় না দোকানদাররাও। তারাও বিভিন্ন সময় বাঁজে আচরণ করে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ব্যাপারে নিরব ভুমিকা পালন করে সবসময়ই। এলাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার আওতাধীন নয় তাই হয়তো প্রশাসন নিশ্চুপ থাকেন বলে মনে করছের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকার বিনোদপুরে মেসে থাকা এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির মালিকরা প্রতি ছয় মাস/১ বছর পরপর বিদ্যুৎ/ ময়লা/ পরিস্কার বিল ইত্যাদির নাম করে বাসা ভাড়া বাড়ান।

বাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়েছে এরকম নানান অজুহাতে খাবারের দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন খরচ বাড়িয়ে দেন তারা। আমাদের তো হলে উঠারও ব্যবস্থা নেই। সেখানে পর্যাপ্ত সিট নেই। যা আছে তাও রাজনৈতিক নেতাদের হাতে।

আমাদের কথা বলা বা প্রতিবাদ করার উপায় থাকে না। আমরা বাধ্য হয়েই এসবে থাকি, সব মেসেই একই অবস্থা।

আমজাদের মোড়ে মেসে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী বিটিসি নিউজকে জানায়, স্থানীয় যুবকেরা মাঝে মাঝে রুমে বা মেসের চিপায় চাপায় এসে নেশা করে।

অনেক সময় তারা আমাদের থেকে জোর করে টাকা ধার নিয়ে যায় কিন্তু ফেরত দেয় না। দোকানদার, মেস মালিকসহ সকলের অত্যাচার নিরবে সহ্য করতে চলতে হয়। কিছু বলতে গেলে তারা তাদের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে।

স্থানীয় আহমেদ সেতু নামের এক যুবক বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা স্থানীয় মানুষ। আমাদের মাথায় থাকে যে স্থানীয়দের সাথে যেন শিক্ষার্থীরা ক্ষমতা না দেখানোর চেষ্টা করে। তারা ক্যাম্পাসের ভিতরে ঝামেলা করলে আমরা বাহিরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি।

হ্যাঁ, তা সত্য যে বাহিরে অনেক বকাটেই ছিনতাই, চাঁদাবজির মতো অবৈধ কাজ করে। আর যাই বলেন না কেন স্থানীয়দের এতটুকু ক্ষমতা সব জায়গায়ই আছে।

এসব সমস্যার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, ক্যাম্পাসের সীমানার আওতার বাহিরে কি হয় না হয় সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করতে পারবে না।

তবে কোনো ঘটনা জানানো হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে মেস মালিকদের সুদৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। তারা চাইলেই শিক্ষার্থীদের ভালো রাখতে পারেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.