রাবি প্রতিষ্ঠাতা মাদার বখশ্‘র ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল


প্রেস বিজ্ঞপ্তি: অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদ সদস্য (এমএলএ), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠাতা, উত্তরবঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম অগ্রদূত, রাজশাহী পৌরসভার আদর্শ চেয়ারম্যান ও খ্যাতিমান গরিবের আইনজীবী জননেতা মাদার বখশ্ এর ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারী)।
১৯৬৭ সালের আজকের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পরলোকগমন করেন তিনি। জননেতা মাদার বখশ্ এর ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও রাজশাহী প্রেসক্লাব।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী প্রেসক্লাব ও স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসলাম-উদ-দৌলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য বিশিষ্ট কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত কুমার সাহা।
অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখবেন রাজশাহী বারের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজী শওকত সালেহিন এলেন, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সহঃ সভাপতি সালাউদ্দীন মিন্টু, প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক আমানুল্লাহ আমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসনে আলী পেয়ারা প্রমূখ। এর আগে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজক দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্ত ও অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক মাদার বখশ ১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রয়ারি নাটোর জেলার (তৎকালীন নাটোর মহকুমা) সিংড়ার স্থাপনদীঘি গ্রামে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বলিউদ্দিন মন্ডল। ১৯২২ সালে তিঁনি সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণিতে মেট্রিক, রাজশাহী কলেজ হতে ১৯২৪ সালে আইএ এবং ১৯২৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাস করেন এবং ১৯২৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বিএল ডিগ্রী লাভ করেন।
মুর্শিদাবাদ ও নওগাঁয় শিক্ষকতা করার পর মাদার বখশ ১৯৩৪ সালে রাজশাহীতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। একই সময়ে আইন পেশার পাশাপাশি তিঁনি মনোনিবেশ করেন সমাজসেবায়। মাদার বখ্শ অসহায় মানুষদের পক্ষে পারিশ্রমিক ছাড়া মামলা পরিচালনার জন্য খ্যাতি লাভ করেন।
তিনি চল্লিশের দশকের প্রারম্ভে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এরপর ১৯৪৬ সালে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) প্রতিনিধি হিসেবে অবিভক্ত বাংলার বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। মাদার বখশ ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন।
মাদার বখশ মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তথাপিও ছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকেই শহীদ হন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রয়ারি রাজশাহী ভুবনমোহন পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মাদার বখশ অন্যতম আয়োজক ও প্রধান বক্তা ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের তিনিই একমাত্র এমএলএ যিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারির ঘটনায় নিজ দলীয় সরকারের সমালোচনা করার দায়ে কারাবরণ করেছিলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে দলের নীতিনির্ধারক ও সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানের কারণে মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রয়ারি রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জননেতা মাদার বখশ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা না হয়, তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চে প্রাদেশিক আইন সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়।
ক্ষণজন্মা-মহৎপ্রাণ মাদার বখশ ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে কোর্ট একাডেমি নামে পরিচিত), ১৯৬০ সালে লক্ষীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তারই নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে রাজশাহীতে প্রথম বেসরকারি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৫৫ সালে সরকারিকরণ এবং ১৯৫৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামে নামকরণ করা হয়। এছাড়া রাজশাহী মহিলা কলেজ, রাজশাহী গার্লস মাদ্রাসা (বর্তমানে গার্লস হাইস্কুল), রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুলসহ আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। মাদার বখশের কন্যা মনোয়ারা রহমান (১৯৩৪-২০১০) একজন ভাষাসৈনিক ছিলেন এবং পুত্র আ ন ম সালেহ (১৯৫২-২০১১) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করতেন।
মাদার বখশের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি আবাসিক ছাত্র হল ‘মাদার বখ্শ হল’ নামে নামকরণ করা হয়। রাজশাহী মহানগরীতে মাদার বখশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি নামের একটি কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের একটি ছাত্রাবাস মাদার বখশ-এর নামে রাখা হয়।
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পেট্রোল পাম্প-সংলগ্ন ব্রিজটির নামও মাদার বখশ-এর নামেই রাখা হয়েছে। প্রতিভাবান এ মানুষটি দুরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি, শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বার্তা প্রেরক-আমানুল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ, সদস্য, রাজশাহী প্রেসক্লাব। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.