রাবি ছাত্রীদের ‘বিনোদিনী বাজার’

রাবি প্রতিনিধি: ছাত্রীরা এটিকে ‘বিনোদিনী বাজার’ বলেই চেনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রী হলের প্রায় সব ছাত্রীদের আনাগোনা রয়েছে বিনোদিনী বাজারে। টুকটাক প্রয়োজনে রাবির অধিকাংশ ছাত্রীর ভরসা এই বিনোদিনী বাজার। তবে আয়েশি ছাত্রীদের জন্য ভরসাটা একটু বেশিই। গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টা। আগের দিন রাতের ভারী বৃষ্টিতে বসন্তের সকালেও যেন শীতের আমেজ। গায়ে হালকা চাদর জড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছিলেন খালেদা জিয়া হলের ছাত্রী আফসানা রিয়া। হলের পাশেই ততক্ষণে শাক-সবজি ও মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী। সেখান থেকেই বাজার সেরে হলে ফিরছেন রিয়া।

কথা বলে জানা গেল, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। হলে থাকছেন প্রায় দুই বছর। নিয়মিতই এখান থেকে শাক-সবজি, মাছসহ রান্নার বিভিন্ন উপকরণ কেনেন।
রিয়া জানালেন, ছাত্রীরা এটিকে ‘বিনোদিনী বাজার’ বলেই চেনে। টুকটাক প্রয়োজনে অধিকাংশ ছাত্রীর ভরসা এই বিনোদিনী বাজার। তবে আয়েশি ছাত্রীদের জন্য ভরসাটা একটু বেশিই।

শুধু রিয়া নই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি ছাত্রী হলের প্রায় সব ছাত্রীরই আনাগোনা রয়েছে বিনোদিনী বাজারে। কেউ বা সকালে ক্লাস যাওয়ার আগে, কেউ আবার ক্লাস শেষে হলে ফেরার পথে বাজার সেরে ফেলেন এখান থেকে। এই বাজারে ছাত্রদের নেই তেমন আনাগোনা। যারা আসেন, তাদের হাতে দেখা মেলে প্রেমিকার জন্যই করা বাজারের ব্যাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের পাশ ঘেঁষে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনে যাওয়ার রাস্তার পাশে বিনোদিনী বাজারের অবস্থান। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ভ্যান থেকে পণ্য নামিয়ে সবেমাত্র সাজিয়ে রাখতে শুরু করেছেন দু’জন ব্যবসায়ী। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে দেখা মিলল আরও পাঁচ/ছয়জনের। যারা সবাই শাক-সবজি, মসলা, মাছের পসরা সাজিয়ে নিয়মিত বসেন এখানে।

বাজার ঘুরে সবজির মধ্যে দেখা গেল- আলু, ফুলকপি, পাতাকপি, করলা, লাল শাক, লাউ, টমেটো, পেয়াজ, মরিচ, রসুনসহ শীতকালীন নানা সবজি ও মাছ বিক্রির জন্য বসেছেন দোকানিরা। এছাড়াও এখানে চাল, ডাল, তেল, লবন, হলুদ ও মরিচের গুঁড়াও বিক্রি করা হয়।

ত্রিশ বছর ধরে ছাত্রী হলের আশেপাশেই সবজি বিক্রি করে সংসার চালান নগরীর বুধপাড়ার বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া।

তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে এই ব্যবসা করছি। আগে মন্নুজান হলের পাশে দোকান করতাম। তবে গত ৫ বছর ধরে এখানে দোকান করছি। সকালে আসি, সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকি। ছাত্রী মামারাও ভালোই বাজার-সওদা করেন আমার থেকে। বাচ্চু মিয়া আরও বলেন, সবাই যে হঠাৎ এখানে বাজার করতে আসেন তা নয়, আমার থেকে অনেক ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বাজার করেন। কেউ কেউ বাকিতেও নেন। পরে পরিশোধও করে দেন। ভালোই ব্যবসা হয়। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি হয়।

শফিক নামের আরেক ব্যবসায়ী বিটিসি নিউজকে জানান, সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে একদফা ভিড় হয়। সকাল ১০টা থেকে কিছুক্ষণ কিছুটা ফাঁকা গেলেও দুপুর ১২টা নাগাদ ভিড় করে ছাত্রীরা। বিকেলে ক্লাস শেষে ফেরার পথে ক্রেতাদের ভিড় বেধে যায়।

বাজারে আসা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক ছাত্রী জিন্নাত পারভীন বৃষ্টি বলেন, হলের ওঠার পর প্রথম দিকে স্টেশন বাজার, কাজলা অথবা বিনোদপুরে কাঁচা সবজি কিনতে যেতাম। কিছুদিন পর থেকে জানতে পারি এখানেই সব পাওয়া যায়। তাই ওদিকে আর যাওয়া হয় না। এতে রিকশা ভাড়া ও সময় দু’টোই সাশ্রয় হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.