রাবিতে সুস্ময়ের বিতর্কিত কর্মকান্ড !

রাবি প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুষ্ময়ের বিভিন্ন অপকর্মে ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, পরিবহন প্রশাসককে লাঞ্চনা ও বাস চালককে মারধর, ক্যাম্পাসে আম-লিচু বাগান দখল, শিক্ষার্থী-সাংবাদিককে মারধরসহ বিভিন্ন অপকর্মে ক্যাম্পাসে এখন আতঙ্কের নাম ‘সুষ্ময়’। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্ত্বে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় সুষ্ময়ের কুকর্ম বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

যদিও দরিদ্র শিক্ষার্থীর পাশে দাড়ানো, বৃদ্ধা নারীকে দোকান করে দেওয়া, জিম্মি করে নেওয়া মুক্তিপণ উদ্ধার করে দেওয়া, শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা প্রদানসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রমের চেষ্টা করছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, সহ-সভাপতি এহসান মাহফুজসহ অন্য নেতারা। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক সুষ্ময়ের অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে রীতিমত বিব্রত শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছাত্রলীগ ভীতি জন্মাচ্ছে বলে দাবিও সংশ্লিষ্টদের।

ছাত্রলীগের এই নেতার অভিযোগগুলোর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককের মারধর। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে উপাচার্য বরাবর এ অভিযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময়ের কর্মকা-ে বিব্রত ¯¦য়ং ছাত্রলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা। তারা বলছেন, সুষ্ময় ছাত্রলীগের অর্জিত সুনাম নষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব কর্মকা- জড়াচ্ছে। কিন্তু সুষ্ময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের ‘কাছের ম্যান’ হওয়ায় বিষয়টি তারা বুঝেও না বোঝার ভান করছে।

এছাড়াও বিশ্বকিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে সুষ্ময় দায়ী বলে দাবি করছেন তারা।

সুষ্ময়ের কর্মকা- সম্পর্কে বিশ্ববিদালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী লিংকন বলেন, কাম্পাসে ঘটে যাওয়া একাধিক ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সুষ্ময় জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিককের উপর হামলার ঘটনাটি লজ্জাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ দফতরের প্রশাসককে মারধর করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময়ের বিরুদ্ধে। সেসময়ে পরিবহণ দফতরের প্রশাসক প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চলতি বছরের গত ৩০ মে ক্যাম্পাসে টেন্ডার ছাড়াই আম ও লিচু বাগান অবৈধভাবে দখলে নেয় ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময়। যদিও বাগানগুলো দেখভালের দায়িত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের। এঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শোকজও করেছিল। একই সময় সুষ্ময়সহ ১২ জন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ছাত্রী উত্যক্তে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর ২০ নভেম্বর ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাস চালককে মারধর করেন সুষ্ময়।

শুধু তাই নয়, দলীয় কোন্দলের ঘটনায়ও সুষ্ময়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় সাবরুন জামিল সুষ্ময়ে নেতৃত্বে ১০-১২ জন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং মারধরের ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাণিজ্যিক দহন সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে প্রতিবাদ করছিলো ছাত্রজোট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুষ্ময় ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়ের কোমরে সজোরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। গুরতর আহত অবস্থায় আমার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেয়। এ ঘটনায় চারুকলার এক শিক্ষার্থীর হাত ভেঙ্গে যায় ছাত্রলীগের মারধরে।

সুষ্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সুষ্ময়ের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছিল। আমরা সেগুলো তদন্ত করেছি। দুই-এক দিন আগে সাংবাদিক মারধরের বিষয়েও একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সুস্ময়ের সঙ্গে এখনো আমাদের কথা হয়নি। আমি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সুস্ময়ের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কয়েকদিন আগে সিনেমা দেখাকে কেন্দ্র করে বাম জোটের সঙ্গে একটা ঝামেলার কথা শুনেছিলাম। অন্য বিষয়গুলো আমার জানা নাই। অভিযোগ সত্য হলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি আহমেদ ফরিদ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.