রাবিতে শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনে হাতাহাতি (ভিডিও)

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং হাতাহাতি শুরু হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়।

এর আগে গতকাল সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকালে ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বিভাগের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যানিং কমিটির তিন সদস্য। এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিভাগের সভাপতি। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, যুগল কুমারের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। পরবর্তীতে প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাওছার আলী ও নুরুল আলম এবং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একেএম বারী উপস্থিত হলে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

গতকাল সোমবার প্ল্যানিং কমিটির তিন সদস্য (অধ্যাপক মু. আলী আসগর, নুরুল আলম ও কাওছার আলী) সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর দুটি সভা ডাকেন। এসব সভায় উপস্থিত না থাকার পরও দুই জন সদস্যকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় প্ল্যানিং কমিটির সভা ডেকে সভাপতি নিজেই আসেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি ও বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সঠিক সময় চিঠি ইস্যু করেছি। তারা হয়তো বক্স খুলে দেখেন নাই। তাই চিঠি পাননি।’ সংবাদ সম্মেলনে হাতাহাতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাল তারা যখন সংবাদ সম্মেলন করেছেন আমরা সেখানে যাইনি। কিন্তু আজ সংবাদ সম্মেলনকে পণ্ড করতে তারা এখানে উপস্থিত হন।’

অধ্যাপক নুরুল আলম, কাওছার আলী এবং মু. আলী আসগর দাবি করেন, প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে সভা দেখানোর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিভাগের রেজিস্ট্রার ডায়েরি ও পিয়ন রেজিস্ট্রার ডায়েরি গোপন করে ফেলেছেন।

গতকাল সোমবার (৩০) ডিসেম্বর ক্রপ সায়েন্স বিভাগের অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে অফিসের পিয়ন মোতালেব জানান, সোমবার সকালে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এবং অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম এসে রেজিস্ট্রার ডায়েরি ও পিয়ন রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে চলে গেছে।

জানতে চাইলে খাতা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে নিয়ে গিয়েছিলাম। কাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরে ছিলাম। তাই আজ খাতা নিয়ে এসেছি।’

সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে পরপর দুটি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মিটিং দেখানোর কারণ কী জানতে চাইলে প্ল্যানিং কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক মু. আলী আসগর বলেন, ‘অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আমাকে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়েছে প্ল্যানিং কমিটির তিনটি সভা হয়েছে, অথচ সিদ্ধান্ত হয়নি−এমনটা দেখিয়ে প্রশাসনের কাছে পাঠাতে। সেই জন্য হয়তো তিনি এমনটা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না অথচ দেখানো হয়েছে, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কপি-পেস্ট করতে গিয়ে উপস্থিতি দেখানো হয়ে গেছে। ভুলটি দেখার পরে আজ আমি সেটি সংশোধন করেছি।’

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ক্রপ সায়েন্স বিভাগ প্রতিষ্ঠার সময় শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৩ জন। পরে গত ১৫ বছরে আর কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দীনের আমলে তিনটি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৩৮টি দরখাস্ত জমা পড়ে। পরবর্তীতে বর্তমান প্রশাসন চলতি বছরের ৩০ জুলাই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করলে এতে ৪৭টি দরখাস্ত জমা পড়ে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।

এই বিরোধ নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটি পক্ষ বলছেন, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান ব্রিডিং স্ট্রিমের। কিন্তু প্রশাসন তাদের ‘নিকটাত্মীয়দের’ নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান ব্রিডিং অবলিক দিয়ে এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি করা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষকের স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রীকে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে প্রশাসনের সঙ্গে একাট্টা হয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

স্ত্রীর চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী অফিসার পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছে। ভাইভাও দিয়েছে। কিন্তু আমি বিএনপিপন্থী শিক্ষক, ডিন ছিলাম অনুষদের। আমার স্ত্রীকে চাকরি দেবে না।’

অন্য পক্ষটি বলছে, অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পর বিভাগের সভাপতি হবেন অধ্যাপক মু. আলী আসগর। তিনি (আলী আসগর) চান, যেকোনও মূল্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে। এর জন্য তিনি হাইকোর্টে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করায় তিনিসহ প্ল্যানিং কমিটির অন্য দুই সদস্যকে নিয়ে নিয়োগ ঠেকাতে প্ল্যানিং কমিটির মিটিংয়ে আসছেন না। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.