রাবিতে একাডেমিক ভবনের শৌচাগার গুলোর বেহাল অবস্থা

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের ব্যবহার্য শৌচাগারগুলোর বেহাল দশা। শৌচাগারের জরাজীর্ণ অবস্থা, ময়লা-দূর্গন্ধ, নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলাদা শৌচাগার না থাকায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ছিটকিনি, বদনা, ট্যাপে পানি না থাকা নিয়মিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো শৌচাগার বন্ধ আছে বছর ধরে। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রশাসনের অযতœ ও অবহেলা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শৌচাগারের নোংরা পরিবেশের কারণে আমরা হর হামেশাই সমস্যায় পড়ছি। মেয়েদের জন্য একাডেমিক ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। যার ফলে প্রাকৃতিক কাজ সারতে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা দ্রুত দূর করা জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ছাত্রীদের। এ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় শৌচাগার অপর্যাপ্ত। অনেক সময় ছাত্রদের ব্যবহৃত শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। এক ছাত্রী প্রবেশ করলে অন্য আরেকজন থাকে পাহারায়। যার ফলে ছেলে-মেয়ে উভয়কে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবন, শহীদুল্লাহ কলা ভবন. মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট নয়টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চিকিৎসা কেন্দ্রসহ অধিকাংশ ভবনের শৌচাগারের বেহাল দশা। আবার যেগুলো মোটামুটি ব্যবহারের উপযোগী সেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় শৌচাগারগুলো ভেঙ্গে ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ শৌচাগারের সিটকানি নেই। বেসিন ভাঙ্গা, ব্যবহৃত পানির ট্যাপগুলো নষ্ট। পানির ট্যাপ ভেঙ্গে অনবরত পানি পড়ে শৌচাগারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সবচেয়ে বেহাল দশা মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন, শহীদুল্লাহ কলা ভবন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনের শৌচাগারগুলোর। আকারে ছোট হওয়ায় ভালভাবে বসা যায় না। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যাবস্থা না থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থা বিরাজ করছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। উৎকট দূর্গন্ধের কারণে ভেতরে প্রবেশ করা কষ্টকর।

সিরাজী ভবনে ক্লাস হয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইতি রানা সাহার। কলা অনুষদ এই ভবনের নিচ তলায় ক্লাস হলেও টয়লেটের প্রয়োজনে প্রায়ই তাকে যেতে হয় ৩য় তলায়। কারণ পরো ভবনে মেয়েদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র টয়লেট। আর সেটিও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। তবুও অনেকটা বাধ্য হয়েই তা ব্যবহার করতে হয়। ইতি নয়। তার মতো অনেক শিক্ষার্থীকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শহীদুল্লা, মমতাজ উদ্দীন ভবন ছাড়াও বাকি ৬টি ভবনে এভাবেই প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে।

অপর্যাপ্ত শৌচাগার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ছাত্রীদের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকতে হয় বলে জানান দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া সিলভী। এ শিক্ষার্থী বলেন, ভতির পর থেকে মেয়েদের টয়লেটটি কখনো পরিষ্কার দেখিনি। এখানে পানি না থাকা নিত্যদিনের ঘটনা। তাই ক্লাস করতে এসে রীতিমত বিপাকে পড়তে হয়। মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়। এছাড়া শৌচাগারগুলোর দূর্গন্ধের কারণে বমি চলে আসার মত পরিস্থিতি হয়।’
অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষাথীদের জন্য শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দায়িত্ব। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শৌচাগারই ব্যবহারের অনুপযোগী। এবং আমাদের মেয়েদের শৌচাগারের তো আরও বেহাল দশা। যা শিক্ষার পরিবেশ এবং আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের মান বিনষ্ট করছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বিটিসি নিউজকে জানান, ‘কোন অনুষদ বা বিভাগ শৌচাগার সংস্কারের বিষয়ে আমাদের জানালে আমার দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সংস্কার করি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে আমারা সম্প্রতি শহীদুল্লা কলা ভবনে মেয়েদের জন্য কমন রুমের পাশে মানসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করেছি। অন্যদিকে মমতাজ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনের টয়লেট গুলো দুই এক মাসের ভিতর সংস্কার করে দিতে পারব বলে আশা করছি। অন্যদিকে দূর্গন্ধ দূর করতে নিয়মিত পরিষ্কারের জন্য ইতিমধ্যেই স্টুয়ার্ড শাখাকে চাপ দেওয়া হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখার সহকারী জানান, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।

 সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর  রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.