রানীনগরে মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার জেরে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রানীনগরে মাদক ব্যবসায়ীকে ধরিয়ে দেয়ারজেরে সোনামুল খন্দকার (২৫) নামে এক যুবককে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়েদেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

মাদকব্যবসায়ীর সাথে ওই দুই কর্মকর্তা যোগসাজস করে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া এ মামলায় উপজেলার ভবানীপুর গ্রামেরইন্তাজের ছেলে নিরহ এক গ্রীলের মিস্ত্রী মানিক (২৫) ১মাস ১০ দিন জেলহাজত খেটে জামিনে বেরিয়েছেন। সোনামুল খন্দকার উপজেলার দূর্গাপুরগ্রামের সমতুল খন্দকারের ছেলে এবং মানিক ভবানিপুর গ্রামের ইন্তাজের ছেলে।

পুলিশের দুই কর্মকর্তা হলেন, রানীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই)সরকার ইফতে খারুল মোকাম্মেল ও এএসআই লুৎফর রহমান। মাদক মামলায় জড়িয়ে দিয়ে হয়রানিতে শিকার মামলার ২নম্বর আসামী সোনামুল খন্দকার প্রতিকার চেয়ে গত ২৫ মে আইজিপি বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন।

মাদক নিয়ন্ত্রন অভিযানে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেক নিরহ মানুষ। পুলিশের সাথে মাদকব্যসায়ীদের যোগসাজস অথবা পুলিশ হয়রানি করতেই অনেক নিরহ মানুষ ফেঁসে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সচেতনরা।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মে উপজেলার মিরাট ইউনিয়নেরপাগলীর মোড়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সরকারইফতে খারুল মোকাম্মেল ও এএসআই লুৎফর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে।

এসময় বাজারে সোনামুল খন্দকারের কথিত অফিসেরদিকে পুলিশ যাওয়ার সময় তিনজন লোক দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেমানিক নামে এক যুবককে আটক করা হয়।

স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে মানিকেরশরীর তল্লাশি করে ৯ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মামলার ২ নম্বরআসামী সোনামুল খন্দকার ও ৩ নম্বর আসামী হাতকাটা জহুরুল (২৬) দৌড়দিয়ে পালিয়ে যায়।

এসময় সোনামুল খন্দকার পালানোর সময় ১৩ পুরিয়াহেরোইন ফেলে যায় এবং তার অফিসের চৌকির তোষকের নিচ থেকে ৮৭ গ্রামহেরোইন উদ্ধার করা হয়।জানা গেছে, পাগলীর মোড়ে মানিক গ্রীলের মিস্ত্রীর কাজ করেন।

ঘটনার দিন বিকেলে মোবাইল ফোনে হাতকাটা জহুরুল বাজারের অপর প্রান্তে একটি অফিসের গ্রীলের মাপ নেয়ার জন্য মানিককে ডেকে নেয়। মানিক গ্রীলের মাপনেয়া শুরু করলে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।

এসময় হাতকাটা জহুরুল দৌড়দিয়ে পালিয়ে যায়। মামলায় বাজারে সোনামুল খন্দকারের কথিত অফিস ঘরের যে কথা বলা হয়েছে তা গত ৩ বছর থেকে ময়নুল হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে আসাদ নামে অপর এক ব্যক্তি ভাড়া নিয়ে অফিস করেছেন।

সেখানে মাছের খাবার রাখা হয়। তবে ওই অফিসে সোনামুল খন্দকার ও মিস্ত্রী মানিক কখনো যাননি। ঘটনার দিনও সোনামুল খন্দকার সেখানে ছিলেন না। এছাড়া সোনামুল খন্দকার ও মিস্ত্রী মানিক কোন মাদক সেবন বা বিক্রির সাথে জড়িত না। মাদক ব্যবসায়ী ইলাহী ও গড ফাদার মীর কাশিম (আপন) বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করেন।

মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে অ॥িাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যেরয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পছন্দমত স্বাক্ষীর নাম দিয়ে মনগড়া বক্তব্যদিয়েছেন। মহসিন নামে এক যুবককে স্বাক্ষীর বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

অথচ ওইস্বাক্ষী জানেন না, তার নামে স্বাক্ষী করা হয়েছে। ভুক্তভোগী মানিক বলেন, হাতকাটা জহুরুল গ্রীল তৈরী করে নেয়ার জন্য অনেকআগে থেকেই আমাকে বলেছিল। ঘটনার দিন আমাকে ফোনে ডেকে নেয়ার পরগ্রীলের মাপ নিতে বলে। মাপ নেয়ার সময় পুলিশ এসে আমাকে আটক করলেজহুরুল পালিয়ে যায়।

সেখানে থেকে আমাকে থানায় নেয়ার পর সোনামুলেরনামেও মামলা দেয়া হয়। আমি যদি মাদক খাই বা বিক্রি করি আমারবিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার স্বাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে জানা যায়, স্বাক্ষীদের সহ পুলিশেরউপস্থিতি টের পেয়ে সোনামুল খন্দকার ও হাতকাটা জহুরুল পালিয়ে যায়।

বাজারে সোনামুল খন্দকার একজনের ভাড়া করা ঘর নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার এবং মাদক ব্যবসা করেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে মানিককে আটকের পরস্বাক্ষীদের সামনে তার দেহ তল্লাশি করে টাউজারের পকেটে থাকা সাদাপলিথিনে মোড়ানো ৯ পুরিয়া হোরোইন পাওয়া যায়।

মামলার স্বাক্ষী ভ্যান চালক মনোয়ার হোসেন, নরসুন্দর রাসেদ ও চা দোকানীমন্টু মন্ডল এফিডেভিট করে বিটিসি নিউজকে বলেন, এজাহারে বর্নিত আসামী সোনামুল খন্দকার পালিয়ে যাওয়ার কথা মিথ্যা। সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো না। মানিক নামে এক যুবককে আটকের পর তাদের সামনে তল্লাশি করে কোন মাদক উদ্ধার হয়নি।

ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও পুলিশ তাদের কাছ থেকে অত্র মামলার জব্দতালিকায় সাদা ফরমে অলিখিত সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ইচ্ছেমত বক্তব্যলিখেছেন। পুলিশ প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধেমিথ্যা মামলা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী সোনামুল খন্দকার বিটিসি নিউজকে  বলেন, গত ২৫/০৩/২০১৯ তারিখে সন্ধ্যায় ৭৮পিচ ইয়াবা সহ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ইলাহীকে থানা পুলিশেধরিয়ে দিতে আমিসহ কয়েকজন সহযোগিতা করি।

এরই জের ধরে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের সাথেযোগসাজস করে আমাকে পলাতক ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে। যা মিথ্যাএবং ভিত্তিহীন।

বিষয়টি তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি। এছাড়ামামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফইম উদ্দিন জনসম্মূখে হুমকি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে আরো ৪/৫ টি মামলায় জড়িয়ে দিবে বলেও হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

এএসআই লুৎফর রহমান রহমান এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননা। উপ-পরিদর্শক (এসআই) সরকার ইফতে খারুল মোকাম্মেল বলেন, মামলাটিবিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।

এখন বিজ্ঞ আদালত যদি মনে করে ব্যক্তি নির্দোশ তাহলে ছাড়া পাবে, আবার যদি দোষী হয় তাহলে শাস্তি পাবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফইম উদ্দিন বলেন,তারা সবাই মাদকের সাথে জড়িত।

ঘটনার দিন ঘটনাস্থল থেকে মানিক নামে একজনকে আটক করা হয়। আরও দুইজন পালিয়ে যায়। মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আদালতেই তারা বুঝবে।

তবে মামলার স্বাক্ষী সহকাউকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা। নওগাঁ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল লিমন রায় আইজিপি বরাবর দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননা। তিনি বলেন, যদি দরখাস্ত আসে, তাহলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.