রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা  

(রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: রাজভবনে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করছেন- এর মধ্যে সম্ভবত অস্বাভাবিক বা অসাধারণ কিছু নেই। থাকার কথাও নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে একান্ত বৈঠকে বসেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে এবং সেই বৈঠক চলেছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক – এই ঘটনা মিডিয়া,রাজনৈতিক মহল এবং অবশ্যই জনমনে সীমাহীন কৌতুহল উদ্রেক করার পক্ষে যথেষ্ট। কারণটা অবশ্যই রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে টানাপোড়েনের সম্পর্ক।
আজ বুধবার (১৪জুলাই) এই কৌতুহল উদ্দীপক বৈঠকেরই সাক্ষী থাকলো বাংলা।
বিকেল ৪টে নাগাদ রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সোজা পৌঁছে যান রাজভবনে। রাজ্যপালের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তাঁর একান্ত বৈঠক। কিন্তু না, তার আগে বা পরে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে কিছুই জানাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে সরকারি তরফে।
তবে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দু’জনের মধ্যে মত বিনিময়ের  সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে প্রথম বিষয়টা হচ্ছে বিধান পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ আগ্রহে ১৯৬৯এ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিধান পরিষদ আবার ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে এই মর্মে বিলও পাশ হয়েছে তৃণমূলের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে। কিন্তু আগাগোড়া এর তীব্র বিরোধীতা করছে বিজেপি। অথচ রাজ্য বিধানসভায় এই বিল গৃহীত হলেও এখনও বাকি অনেক প্রক্রিয়া। প্রথমেই চাই রাজ্যপালের স্বাক্ষর। তারপরে আইনমন্ত্রক হয়ে এই বিলের অনুমোদন চাই লোকসভা এবং রাজ্যসভায়। এরপরে রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রশ্ন। রাজ্যের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্বের মধ্যে এই নিয়ে কথাবার্তা হতেই পারে।
রাজ্য বাজেটে ব্যয়বরাদ্দের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা চাইতে পারেন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা হয়েছিল বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই। রাজ্যপালের বাজেট ভাষণকে কেন্দ্র করে বিরোধীতার ঝড় বয়ে গিয়েছিল ঐদিন।
কথা হতে পারে রাজ্যে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের অভিযোগের বিষয়ে। এ ব্যাপারে বারবার রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে বিজেপি। রাজ্যপাল নিজেও এই নিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই নিয়ে দু’জনের মধ্যে তীব্র মতবিরোধও হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের এক্তিয়ার নিয়েও। উঠেছে অভিযোগ,পাল্টা অভিযোগ। বরফ গলার ইঙ্গিত মিলতে পারে বুধবারের একান্ত বৈঠকে।
বিজেপি-র প্রতীকের দৌলতে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম  নির্বাচনে জয়লাভের স্বাদ গ্রহণ করেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ও  হতে পারেন আজকের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর বিধায়ক পদ আঁকড়ে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে বিরোধী দল বিজেপি। তাঁকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করার প্রতিবাদে ৮টা কমিটির শীর্ষপদ প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে গতকালই (মঙ্গলবার ১৩জুলাই) বিজেপি বিধায়করা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে এর  প্রতিকার দাবি করেন। রাজ্যপাল কি এরই আইনগত দিকটা ভালোভাবে বুঝে নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে?
নাকি উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের স্বীকৃতির দাবিকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে গভীর উদ্বেগ?
না, সরকারিভাবে জানানো হয়নি কোনওটাই। তবুও জগদীপ ধনখড় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠক যে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ(বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.