রাজশাহী-৬, নৌকার প্রচারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে চারঘাট উপজেলার ১৬ ও বাঘা উপজেলার ১৮ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শিক্ষকের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার এসব প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ বাতিল করতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাটের শলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন, রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন, চারঘাট মহিলা কলেজের জেষ্ঠ্য প্রভাষক শরিফুল ইসলাম আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়েছেন। অথচ দুদিন আগেও তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁদের প্রচারণার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘুরছে।
চারঘাটের নন্দনগাছী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াহেদুল ইসলাম ও বাঘার মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন। ওয়াহেদুল ইসলাম চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এবং আবুল কালাম আজাদ চারঘাটের ভায়ালীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সক্রিয় কর্মী হিসেবে দুজনেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিয়ত প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান ফেসবুকে নৌকার প্রার্থীর সাথে ছবি দিয়ে লিখেছেন জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা।
এই ছয়জনসহ চারঘাট ও বাঘা উপজেলার ৩৪ জন শিক্ষকের একটি তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রাহেনুল হক। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপজেলাভিত্তিক পৃথক দুই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওই ৩৪ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন কিংবা ছিলেন। এমনকি এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
রাহেনুল হক তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি কিছু সুবিধাভোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের আশঙ্কা আছে। তিনি ওই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন।
চারঘাট উপজেলার ৬২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে লিখিত অভিযোগে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করেছেন রাহেনুল হক। তাঁরা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ১৬ জনই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাঘার ৬৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মধ্যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগে নাম থাকা বাঘার মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। তিন দিন আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাঁর আগে নৌকার প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। প্রশিক্ষণে আমাদের বলা হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এর পর থেকে আমি আর প্রচারণায় যাইনি।
অভিযোগের বিষয়ে চারঘাটের রাওথা কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন বলেন, আমি নৌকার সমর্থক। শিক্ষকেরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না, এ ধরনের আচরণবিধির কথা জানা ছিল না। এজন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হওয়ার আগে প্রচারণা চালিয়েছি। এমন অভিযোগ হতে পারে এজন্য আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে চারঘাট উপজেলার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।
তবে কেউ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাননি বলে নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগ তোলা আমাদের ১৬ জন শিক্ষক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ১২ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। অন্য ৪ জনকে রিজার্ভে রাখা হয়েছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
অভিযোগের বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে এখনো তদন্ত চলমান আছে। তবে যেসকল প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার শামীম আহমেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, চারঘাট-বাঘার প্রিসাইডিং অফিসারের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টির তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি সাইদুর রহমান / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.