রাজশাহী মহানগরীর হজরত শাহ মাখদুম(রু:) দরগায় মূল ভবন বাদ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সুদৃশ্য ফটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করেছিলেন হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রু)। চৌদ্দ শতকে তার অনুপম ব্যাক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের শত শত মানুষ ইসলাম ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন।

মূলত তার মাধ্যমেই বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বিস্তার লাভ করে। মৃত্যুর পর এই দরবেশকে পদ্মার পাড়ে দাফন করা হয়। তার মাজার বা দরগা শরীফের কারণে এলাকাটির নাম এখন দরগাপাড়া।

এলাকাটি রাজশাহী কলেজের পাশেই। মাজার শরীফটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। তবে বেশির ভাগ অবকাঠামো অত্যন্ত পুরাতন ও জরাজীর্ণ হলেও ভিতরের অবকাঠামো সংস্কার না করে জরাজীর্ণ গেটটি সংস্কার করা হচ্ছে। দরগায় আসা মুসল্লি, এলাকাবাসীসহ এটি পরিচালনা কমিটির সদস্যদের দাবি ছিল।

ঐতিহ্যবাহী এই দরগার প্রবেশ মুখে সুদৃশ্য একটি ফটক নির্মাণ শুরু হলেও ভিতরের জরাজীর্ণ অবকাঠামো সংস্কার আপাতত করা হচ্ছে না। এতে স্থানীয় অনেক অধিবাসী বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,গেটের পেছনে যে টাকা ব্যায় করো হচ্ছে তা দিয়ে ভিতরের অনেক অবকাঠামো সংস্কার করা যেত।

অথচ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সুদৃশ্য গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সহযোগিতায় এখন সেখানে সুদৃশ্য ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে কাজের গতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

দরগা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার একমাত্র প্রচেষ্টাতেই এই ফটকের কাজ শুরু হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশকিছু কাজ হয়েছে। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিক্ষিত এই প্রধান ফটক। দরগা মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে শতাধিক লোকের সমাগম ঘটে।

সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে ওরশ মোবারকসহ নানা ইসলামী আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজ করছেন।

এটি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন দরগা পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসী। তবে কাজের গতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তাদের। নামাজ পড়তে এসেছিলেন স্থানীয় একজন বাসিন্দা,তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন নামাজ পড়তে আসি। অনেক লোক হয়। প্রতিবছর ১০ মহরম ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। তখন আরো বেশি লোক হয়।

শুক্রবার জুমার নামাজেও দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা শরীক হন। তাছাড়াও অনেকেই এটি দেখতে আসেন। এটি একটি প্রাচীন মাজার। এর গেটটা আগে ভাল ছিলো না। এখন একটি সুন্দর গেট নির্মাণ হচ্ছে যার প্রয়োজন ছিলো। এটি খুব ভাল উদ্যোগ। কিন্তু কাজের গতি কম। দ্রুত কাজটা শেষ হলে ভাল হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা তার অনুকুলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফটকটি নির্মাণ করতে সিটি করপোরেশনকে দিয়েছেন।

সিটি করপোরেশন ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজটি করছে। ঠিকাদার শ্রমিক নিয়োজিত করে কাজ করাচ্ছেন। কাজের প্রধান মিস্ত্রি আবু তালেব জানান, প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

ইতিমধ্যেই বেজ থেকে শুরু করে ১৮ ফুট পর্যন্ত কাজ হয়েছে। কাজের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হয়েছে। ফটকটি হবে ৫৪ ফুট পর্যন্ত। প্রধান ফটকের পাশে থাকবে আরো দুটি পকেট গেট। যেটি দিয়ে লোকজন চলাফেরা করতে পারবে। আর গেটটি হবে অত্যান্ত আধুনিক মানের। গেটের উপরে থাকবে চারটি মিনার এবং একটি গম্বুজ। মিডল গেটের ভেতরে থাকবে আরেকটা গম্বুজ।

তিনি আরো জানান, গেটটি হবে দৈর্ঘ্যে ৪২ ফুট এবং প্রস্থে ২২ ফুট। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) ওয়াকাফ এস্টেটের হিসাবরক্ষক শরিফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, আমাদের অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে এই গেটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরনো গেট ছিল বলে অনেকেই চিনতো পারতো না।

গেটটি সম্পন্ন হলে দরগার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ফটক নির্মাণে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার ভূমিকার প্রশংসা করে শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা দরগার দেখাশোনা করি। এর আগে কেউ গেটটি নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। আমরা অনেকের কাছে গিয়ে বলেছি, কেউ সাড়া দেননি। কিন্তু সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা নিজে এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি সহযোগিতা না করলে কাজটি হতো না। এখন তিনি নিয়মিত কাজের খোঁজখবর রাখেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি নিয়মিত রাজশাহীর সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজের খবর রাখি। দরগার ফটক নির্মাণের কাজেরও খোঁজ রাখি। আমাকে যখন ফটক নির্মাণ কাজের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তখন সাথে সাথে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি।

আমি মনে করি সংসদ সদস্য হিসেবে এই কাজ করাটা আমার দায়িত্ব। তবে এখন কাজের গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বলেন, হযরত শাহ মখদুম (র.) এর মাজার রাজশাহীর ঐতিহ্য।

আমি অর্থ দিয়ে এটির সৌন্দর্যবর্দ্ধনে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এখন কাজে গতি নেই। আমি চাই, দ্রুত কাজটা শেষ হোক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা যথাসাধ্য দ্রুততার সাথে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। তবে যেহেতু এটা একটা দৃষ্টিনন্দন ফটক হবে, তাই সময় বেশি লাগছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.