রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন সবজির দোকানে দেখা যাচ্ছে টিসিবির পেঁয়াজ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজের বাজারের আগুন থামেনি। রাজশাহীর বাজারে এখনও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের জন্য ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরম্ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, টিসিবি’র পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া গেলেই নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

তার এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন সবজির দোকানে দেখা যাচ্ছে ঠিক সেই একই রকম পেঁয়াজ, যা টিসিবি বিক্রি করছে। মঙ্গলবার নগরীর লক্ষ্মীপুর কাঁচাবাজার ও হড়গ্রাম বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম ১৯০ টাকা কেজি। অথচ এই পেঁয়াজই টিসিবির পরিবেশকদের ট্রাক থেকে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে।

টিসিবি’র পেঁয়াজ আকারে বেশ বড়। চার থেকে পাঁচটি পেঁয়াজেই ওজন হচ্ছে এক কেজি। সবজির দোকানে লাল রঙের এই পেঁয়াজ দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে সেগুলো মিসর থেকে আসা। টিসিবি এই পেঁয়াজই বিক্রি করছে। কিন্তু কোথা থেকে সবজির দোকানে সেই পেঁয়াজ এলো তা নিয়েই এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে জনমনে ।

বিক্রেতাদের দাবি, ছোট ছোট শিশুরা টিসিবি’র ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনে এনে তাদের কাছে বিক্রি করছে। বিক্রেতারা তা কিনছেন। বিক্রিও করছেন। তবে সবজির দোকানে এতো বেশি পরিমাণ এই পেঁয়াজ দেখে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, সেগুলো টিসিবির ডিলারের কাছ থেকেই এসেছে। তা না হলে এতো বেশি পরিমাণে থাকার কথা না। আর টিসিবি বলছে, ছোট শিশুরা এনে দিলেও সবজি ব্যবসায়ীরা তা কিনতে পারবেন না। এই পেঁয়াজের ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্রেতারা দুই থেকে আড়াইঘণ্টা পর্যন্ত  লাইনে দাঁড়িয়েও টিসিবির পেঁয়াজ কিনছেন।  পুলিশ থাকলেও কোথাও কোথাও লাইন ভেঙে পেঁয়াজ বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পরই বেশিরভাগ ট্রাক থেকে পেঁয়াজ বিক্রি শেষের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যেকটি ট্রাকের জন্য বরাদ্দের এক টন পেঁয়াজ পয়েন্টে আনা হচ্ছে না। আবার ট্রাকে পেঁয়াজ থাকতেও শেষ করা হচ্ছে বিক্রি। ফলে পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে নগরীর সবজির দোকানে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ভদ্রা মোড়ে টিসিবির বরাদ্দকৃত সব পেঁয়াজ বিক্রি না করেই চলে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছেন ডিলারের বিক্রয়কর্মীরা। এই পয়েন্টের ডিলার মেসার্স ওয়াসিম রেজা ট্রেডার্স। পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সব পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা।

গতকাল দুপুর ২টার দিকে নগরীর ভদ্রায় টিসিবি’র ডিলার ওয়াসিমের বিক্রয় পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পেঁয়াজ কিনছেন। সকাল থেকে টিসিবির দেয়া এক টন পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি শুরম্ন করেন ডিলার ওয়াসিম। তবে দুপুর ২টার পর হঠাৎ ডিলারের বিক্রয় কর্মীরা ঘোষণা দেন পেঁয়াজ শেষ। তবে সে সময় ওই ট্রাকের মেঝেতে কয়েক বস্তা পেঁয়াজ বিছিয়ে তার ওপর খালি কয়েকটি বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। বিষয়টি ক্রেতাদের নজরে এলে তারা ঘটনাটি উপ স্থিত পুলিশকে জানান।

পুলিশ গিয়ে বিক্রয় কর্মীদের ওই বস্তাগুলো সরাতে বলে। তবে প্রথমে বিক্রেতারা তা সরাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে পুলিশ ও ক্রেতাদের চাপে ওই বস্তাগুলো সরালে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে কমপক্ষে দুই মণ পেঁয়াজ। এ অবস্থায় উপ স্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় পরি স্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বিক্রয়কর্মীদের বকাঝকা করে। পরে সারিবদ্ধ ক্রেতাদের মাঝে লুকিয়ে রাখা সেই পেঁয়াজগুলো বিক্রি করা হয়।

এই পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য আবদুর রহিম বিটিসি নিউজকে জানান, বিক্রয়কর্মীরা এক টন পেঁয়াজের সবগুলো বিক্রি না করে লুকিয়ে রেখে ট্রাক নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় উপস্থিত জনগণ বিষয়টি ধরে ফেলে। পরে পুলিশের মধ্যস্থ্তায় লুকিয়ে রাখা পেঁয়াজগুলো উপস্থিত ক্রেতাদের মাঝে নিয়মমাফিক বিক্রি করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার ওয়াসিম রেজা বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না। মঙ্গলবারের সব পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়ে গেছে। টিসিবির আঞ্চলিক প্রধান প্রতাপ কুমার জানান, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে নগরীর ৫টি পয়েন্টে ডিলারদের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন একজন ডিলারকে এক টন করে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে।

পাঁচজন ডিলারের মধ্যে ওয়াসিম রেজা একজন। তার লোকজন কিছু পেঁয়াজ বিক্রি না করেই চলে যাচ্ছিলেন বলে তিনিও অভিযোগ পেয়েছেন। এই ডিলারকে শোকজ করা হবে।

সবজির দোকানে টিসিবি’র পেঁয়াজ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, ট্রাকে পেঁয়াজ তুলে দেয়ার সময় আমি আমার অফিসের একটা লোক সঙ্গে দিচ্ছি। তিনি নির্ধারিত পয়েন্টে পেঁয়াজ পৌঁছে দিয়ে আসছেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিততে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরেও কীভাবে পেঁয়াজ সবজির বাজারে যাচ্ছে তা মাথায় আসছে না।

বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর কোনো ডিলার সবজির দোকানে পেঁয়াজ সরবরাহ করে থাকলে তার বিরম্নদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.