রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইতিহাসে ভয়াল একটি রাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: কি ঘটেছিল সেইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইতিহাসে ভয়াল একটি রাত। এই দিন রাত ১টায় জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা সব আবাসিক হলগুলোতে একযোগে ঘুমন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। এই সময় তারা এসএম হলের ছাত্রলীগ নেতা ফারুককে গেস্ট রুমে হাত পায়ের রগ কেটে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তার লাশ আমীর আলী হলের পাশে ম্যানহলে ফেলে রাখে।

এ ছাড়া অন্যান্য হলগুলোতে আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে ফিরোজ, আসাদ, বাদশাহ, রাহী, কাওসারের অবস্থা ছিল গুরুতর। যাদের হাত-পা য়ের রগ কেটে দেয় এবং মাথায় গুরুতর জখম করে। ৬ ফেব্রুয়ারি ছিল রাজশাহী মাদরাসা মাঠে নিজামীর জনসভা। জনসভাকে উদ্দেশ্য করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামাত -শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা রাবির আবাসিক হলে হলে অবস্থান নেয়।

যাদের মূলত উদ্দেশ্য ছিল ২০০৯ সালে শিবির ক্যাডার তাদের সাধারণ সম্পাদক নোমানী খুনের বদলা নেয়া। উল্লেখ্য ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির -ব্যবসায়ীদের মধ্যেকার সংঘর্ষে তৎকালীন শিবিরের সাধারণ সম্পাদক নোমানী মারা যায়। ৬ তারিখ পরই তারা সুযোগ খুঁজছিল ছাত্রলীগ এর ওপর আক্রমণ করার, কথিত নোমানী হত্যার বদলা নেওয়ার ।

০৭ তারিখ ছাত্রলীগ নেতা আসাদ ভাই ও কাওসার বিকালে বঙ্গবন্ধু হলে উঠতে গেলে প্রথম তাদের ওপর শিবির সশস্ত্র হামলা করে। হামলা করার সময় তারা ‘নোমানীর খুনি আসাদ, শেষ করে দে শালাকে’ এই বলে আসাদ ও কাওসারের ওপর হামলা চালায় আসাদকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা করে, গুরুতর জখম হন পরে বাঁচলেও এখন তিনি আঘাতের কারণে অন্ধ।

কেউ তার খোঁজ রাখে না। এরপর তারা রাতে সব হলে হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ওপর হামলার ছক করে। গভীরাতে রাত ১টার পর হলে হলে সশস্ত্র হামলা চালায়। সেইদিন দেখেছি তৎকালীন সভাপতি জয় ভাই-সাধারন সম্পাদক অপু ভাই র কাছে একের পর এক বিভিন্ন হল থেকে হামলার শিকার নেতাকর্মীরা ফোন দিতে থাকে। তখন দেখেছি কর্মীদের জন্য নেতার হৃদয়বিদারক আহাজারি।

জয় ভাই অপু ভাইসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জুবেরী ভবনে আটকা পড়ে যায়। কারণ গোটা ক্যাম্পাসে সহস্রাধিক সশস্ত্র ক্যাডাররা প্রতি হলের ভেতরে বাইরে অবস্থান করে ছাত্রলীগের রুমগুলোতে হামলা করে। জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা এতটাই অস্ত্র বোমাসহ শক্তিশালী যে পুলিশ-র্যাব তাদের অস্ত্রের কাছে পিছু হটে।

জুবেরী ভবনের ভেতরে আটকে পড়া জয় ভাই অপু ভাইসহ সকলের আহাজারি ছিল সহকর্মীদের বাঁচানোর। সেই আহাজারি কান্না আরও বেড়ে যায় যখন সকালে আমীর হলের পাশে ম্যানহোলে ফারুক ভাইর লাশ পাওয়া যায়।সারারাত নির্ঘুম রাত কাটানোর পর এই দৃশ্য ছিল সবার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টের করুণ ও নির্মমতা।একজন ছাত্রলীগ আরেকজন ছাত্রলীগকে কতটা বেশি ভালোবাসে তা দেখেছি।

সেদিন জামাত-শিবিরের বোমা, গুলির শব্দে ক্যাম্পাসের সবপশু পাখির আতঙ্কিত আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সকালের সূর্য উঠার আগেই জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা হল ত্যাগ করে রাজশাহী শহর ত্যাগ করে। বিভিন্ন হলে হলে রক্তের দাগ আর রুমের অবস্থা দেখে কিছুটা অনুমান করা যায় সেই জামাত-শিবিরের হামলার নৃশংসতা কত! ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে হল কর্মচারী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সহ সাধারন ছাত্ররা নির্বাক, হতবম্ভ।

সেই জঙ্গী হামলার প্রত্যক্ষ মদদদাতা নিজামী মুজাহিদ সহ রেজাউল, গোলাপ, সাঈদী জেলে এই ঘটনার মামলায় কিন্তু যারা রাজশাহীর জামাত-শিবির এই হামলায় অংশগ্রহণকারী অনেকেই বাইরে। শিবিরের নেতারা আজ রাবির সনদধারী। কিন্তু কেন? বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের সনদ বাতিল হলে কেন ফারুক ভাইয়ের খুনিরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পায়?

কেন বিনা অপরাধে ছাত্রলীগ নেতাদের ২০১৬ সালের এই ফারুক দিবসেই সিন্ডিকেটের মিটিং এ ছাত্রত্ব কেড়ে নেয় প্রশাসন, শহীদ ফারুকের পরিবারের খোঁজ রাখেনা?

এই শহীদ ফারুকের রক্তের কারণে নিজামী-মুজাহিদ-সাইদী গ্রেফতার হয়। শহীদ ফারুক দিবসে দাবি জানাই শিবিরের ক্যাডারদের সনদ বাতিল করতে হবে। ফারুক ভাইর বোনের চাকরি স্থায়ীকরণ। শহীদ ফারুক স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হোক। রাবিতে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। জামাত-শিবিরের হাতে আক্রান্ত নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করা হোক। শহীদ ফারুক দিবস অমর হোক। মহান আল্লাহ তায়ালা শহীদ ফারুককে জান্নাতবাসী করুন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.