রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়ে-জামাতা নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তে নেমেছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের নামে বাণিজ্য, প্রকল্পের টাকা হরিলুটসহ নানা অনিয়মের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অনিয়ম তদন্তে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারকে।

চিঠিতে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে। রাবির একাধিক সূত্র বিয়য়টি  নিশ্চিত করেছে। গত রবিবার ওই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারের দপ্তর থেকে বুঝিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, রাবির ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান ২০১৭ সালের মে মাসে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িত হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মেয়ে সানজানা সোবহান এবং মেয়ে জামাই এটিএম সাহেদ পারভেজকে চাকরি দেওয়াসহ রাবির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের মেতে উঠেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়ায় বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তে নামে দুদক।

ওই চিঠির সূত্র মতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ২০১৭ সালের মে মাস থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যেসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁর পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কতজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী দিতে বলা হয়েছে দুদককে। এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৩ তম এবং ৪৭৫ তম সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণীর ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে। ওই সভাতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানেও নানা গড়মিল রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক সানজানা সোবহানের নিয়োগের নীতিমালা, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ সকল আবেদনকারীদের আবেদনপত্রের এবং একাডেমিক মেধাক্রমের, নিয়োগপত্রের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। সানজানা সোবহান হলেন ভিসি আব্দুস সোবহানের মেয়ে।

বর্তমান ভিসি নিয়োগের পর শিক্ষক নিয়োগে চরম অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে মার্কেটেকিং বিভাগের শিক্ষক এটিএম সাহেদ পারভেজ ও জুলহাসের নিয়োগেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নিয়োগের সকল কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষকের জন্য করা নতুন নীতিমালাসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং সকল আবেদনকারীদের দেওয়া সমস্ত কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়েছে দুদক।

সূত্র মতে, রাবির ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চ (আইইআর) বিভাগের সর্বশেষ ৮ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন নীতিমালার ফটোকপিসহ আবেদনকারীদের দেওয়া সকল কাজপত্রের ফটোকপিও চেয়েছে দুদক।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ও সাইকলোজি বিভাগে সর্বশেষ চারজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন নীতিমালাসহ অন্যান্য সমস্ত কাগজের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক এফএম আলী হায়দার ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলামের বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে দুদক।

তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এমএ বারি ফোন রিসিভ করেননি। দুদকের তদন্তের চিঠি প্রসঙ্গে তাকে ম্যাসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

একইভাবে ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

তবে দুদকের রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, এই ধরনের কিছু বিষয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে নথিপত্র হাতে পেলে পরবর্তি পদক্ষেপ নিব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.