রাজশাহী পর্যটন বারের আড়ালে জমজমাট মাদক ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহ মখদুম (রু:) এর পুণ্যভূমি, শিক্ষা নগরী রাজশাহীর মত অন্য কোন শহর নেই।এখানকার মানুষ শান্তি প্রিয়।শুধু তাই নয় বিশ্বের মধ্যে আবহাওয়া গত কারণে রাজশাহী এক নম্বরে অবস্থান করছে।
রাজশাহীর বেশীর ভাগ মানুষ নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় প্রকৃতির।
সম্প্রতি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীতে লাইসেন্স প্রাপ্ত বার আছে একটি সেটি (রাজশাহী পর্যটন মোটেলের নামে)।
অনুসন্ধান কালে জানা যায় রাজশাহী পর্যটন মোটেল তার নামে লাইসেন্স নিয়ে ইজারার মাধ্যমে পর্যটন মোটেলের পার্শ্বে অবস্থিত বারটি পরিচালনা করে আসছে। ভিভিআইপি জোনে অবস্থিত হওয়ার এই বারটির একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।উক্ত জোনে রাজশাহীর ডিসি, জজ সহ গুরুত্তপূর্ণ কমকর্তাদের বাস ভবন । রাজশাহী শহরের গোড়া পত্তন হয় এই অঞ্চল থেকে।
বারের লাইসেন্স মদ বিক্রি তথা বারে বসে মদ খাওয়ানোর লাইসেন্স আছে যাদের। কিন্ত পর্যটন বার তার ধারের কাছেও নয়। বারে বসে খাওয়ার থেকে পুসিং সেল বা হোম ডেলিভারি হয় বেশী। যা বারের বেআইনী কার্যক্রম। এটি আইনের মধ্যে পড়ে না। সম্প্রতি অত্র প্রতিবেদন প্রস্তুত কালে নীচ তলায় বসে ম্যানেজারের সাথে কথা বলা কালীন দেখা যায় এভারেজ ৫/১০ মিনিটের মধ্যে একের পর এক মদ সেবনকারী এসে মদ নিয়ে চলে যাচ্ছে।
আবার বিশ্বস্ত কোন মদ সেবনকারী ফোন দিলে তাদের বাসায় পৌছে দেয়া হচ্ছে। কিন্ত পর্যটন বারের আড়ালে চলছে জমজমাট মাদক ব্যবসা।
তার ভেতর চলছে ভেজাল মদের রমরমা ব্যবসা্। ভেজাল মদ খেয়ে মাঝেমধ্যেই আসছে মৃত্যুর খবর। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জীবনও রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অন্ধ কিংবা কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অনেকে।কয়েকদিন আগে রাজশাহীতেও ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কি ধরনের রাসায়নিক দ্বারা তৈরি করা হয় ভেজাল মদ?
অনুসন্ধানে জানা গেছে : এরা এক বোতলের সঙ্গে দুই বোতল টিউনিং করে মদে ভেজাল করত। এদের অনেকে ইথানল আর মিথানলের তফাত বোঝে না। ভয়ংকর বিষ মিথানল : ইথালন হলো রেকটিফায়েড স্পিরিট।
তবে এটি মিথানলের মতো অতটা প্রাণঘাতী নয়। মিথানল ব্যবহার করা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে। এই মিথানল দিয়ে কাঠের আসবাবও রং করা হয়। এটা পরিপূর্ণ বিষ। আর মানুষ এটা খেয়েই মারা যাচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক উপায়েই ইথানল তৈরি হচ্ছে। আর শিল্প-কারখানার জন্য আমদানি করা হচ্ছে মিথানল।
সে হিসেবে ইথানল ও মিথানল দুটি রাসায়নিকই বাংলাদেশে সহজলভ্য। এক লিটার ইথানল কিনতে খরচ হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে এক লিটার মিথানলের খুচরা দাম মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মিথানল রীতিমতো বিষ।
এটা শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ায় কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কিডনি সেই অতিরিক্ত অ্যাসিড বের করে দিতে সক্ষম হয় না। ফলে দ্রুততর সময়ের মধ্যে কিডনি বিকল এবং চোখের মারাত্মক সমস্যা হয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, প্রচন্ড বমি হতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে, একপর্যায়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
এ ছাড়া স্য়ুনাতন্ত্রেও হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মাত্র ১২ মিলিলিটার মিথানল মানুষের পেটে গেলেই অন্ধত্বসহ মৃত্যু হতে পারে। ৬০ মিলিলিটার (এক পেগ) মদে অ্যালকোহল থাকে সর্বোচ্চ ৩০ মিলিলিটার।
সেই সূত্র মেনেই ভেজালকারীরা মিথানল দিয়ে মদ তৈরি করছে। আবার অতিমাত্রায় ইথানল গ্রহণ করার পর ঘুমের বড়ি খেলে হার্ট অ্যাটাকের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। বর্তমানে চোলাই মদে সুগন্ধি আনাতে মাঝেমধ্যেই অতিমাত্রায় অ্যামুনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সেবনকারীরা।
ডিএনসির হিসাবে সারা দেশে বৈধ বার ও ক্লাবের সংখ্যা ১৮৬টি। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বার বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ সরাসরি আমদানী করছে, বাকিরা আমদানীকারকদের কাছ থেকে সরবরাহ নিচ্ছে। এর বাইরে দেশে ২০৩টি মদ বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য শুল্কমুক্ত ওয়্যার হাউস।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.