রাজশাহী নগরীতে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ নেই! ক্রেতা সাধারণের ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীতে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ নেই। চাহিদা থাকলেও যোগানের পরিমাণ খুবই কম। আর এই সুযোগে বাড়তি দাম ধরছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সয়াবিন তেল বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছেন। দোকানে তেল থাকা সত্বেও ক্রেতাদের বলছেন নেই।
তেলের খুচরা ব্যবসায়ীরা বিটিসি নিউজকে বলছেন, রাজশাহীতে গত এক মাস থেকেই প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ নেই। বাজারের কোথাও প্যাকেটজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন নেই। কোম্পানিগুলো আধা লিটার ও এক লিটারের সামান্য কিছু সয়াবিন দিচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। খোলা সয়াবিন তেলও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। খোলা সয়াবিনও বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
খুচরা সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীদের দাবি, কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে সয়াবিনের স্বাভাবিক সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ডিলারদের গোডাউনে মজুদ থাকলেও সেগুলো বাজারে ছাড়ছেন না। অথচ এ বিষয়ে নজরদারি নেই। তারা লাভের জন্য ব্যবসা করছেন। লোকসান গোনার জন্য না। তারা নিজেরাই পাইকারি বেশি দামে কিনছেন। বিক্রিও করছেন বেশি দামে।
শনিবার (১২ মার্চ) নগরীর সাহেববাজার ও আরডিএ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানভেদে একেক দোকানি একেক দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। আধা লিটার ও এক লিটারের সয়াবিন বিক্রি করছেন তারা। প্রতি লিটার প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের দাম ধরছেন ১৬৮ থেকে ১৮০ টাকা। লিখিত মূল্যের চেয়ে অনেকেই দাম বেশি নিচ্ছেন। আর খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা লিটার। আর বাজার ঘুরে পাঁচ লিটারের প্যাকেটজাত সয়াবিনের দেখা মেলেনি।
এদিন, সাহেববাজার হাবিব স্টোরে গিয়ে তেল চাইলে তিনি জানান, তার দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল নেই। খোলা তেল আছে। প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল তিনি বিক্রি করছেন ১৬৫ টাকা।
কাদের স্টোরে গেলে ওই দোকানের মালিক জানান, তার দোকানে প্যাকেটজাত হাফ লিটারের প্যাকেটজাত বোতাল ছাড়া সয়াবিন তেল নেই। কোম্পানি দিচ্ছে না। একই কথা জানান, টোটন স্টোরের মালিক টোটন। তিনি ৮৪ টাকায় হাফ লিটারের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন।
রুপচাঁদা কোম্পানির রাজশাহীস্থ ডিলারের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম আরিফ বিটিসি নিউজকে জানান, গত মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত তারা বাজারে সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। এরপরপরই বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা বাড়তে থাকে। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে তাদের এরিয়ার মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০ টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। যেটা গত ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ টনে। এখনো বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা প্রচুর।
তিনি আরও জানান, গ্রাহকদের কারণেই সয়াবিন তেলের বাজারে এমন সংকট। যাদের এক লিটার তেল লাগবে তারা পাঁচ লিটার-দশ লিটার পর্যন্ত তেল এক সঙ্গে কিনছেন। অনেকে মজুদ করছেন। তবে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তারা চেষ্টা করছেন।
এদিকে, তেলের তানে সুর মিলিয়ে বেড়েছে ডাল, আটা ও চালের দাম। কেজিতে ডাল ও আটার দাম বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। গমের লাল আটা বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৩৬ টাকা। চাউলের আটা ৫০ থেকে ৫২ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বুট গত সপ্তাহে ছিলো ৭০ টাকা। বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। দেশি বুটের ডাল বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিলো ১০০ টাকা। অষ্ট্রেলিয়ান বুটের ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।
চালের দামও দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আঠাশ ও শরণা কেজিতে দুই টাকা এবং আতপ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন উর্ধ্বমূখী প্রবণতা ও তেল নিয়ে তেলেশমাতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার একটি ক্লিনিকে কাজ করেন মাহবুব। এদিন দুপুরে সাহেব বাজারে তেল কিনতে আসেন তিনি। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরো লক্ষ্মীপুর এলাকায় তিন দিন ধরে সয়াবিন তেল খুঁজছেন। কোন দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল নাই। একারণে সাহেব বাজারে এসেছেন। এখানেও পাঁচ লিটারের কোন বোতল নাই। এক লিটার আর দু’লিটারের বোতল।
এদিকে, সবজি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এদিন ফুলকোপি ৩০ টাকা কেজি এবং বাঁধা কপি ৩০ টাকা পিস ধরে বিক্রি হয়েছে। সবজির মধ্যে সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে পটল ১২০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৩০ টাকা কম। বেগুন প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ২০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, ডমুর ৪০ টাকা, কলা ২০ টাকা হালি ও প্রতি আঁটি শাক ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও রসুন ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছের মধ্যে ইলিশ আকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ২০০ টাকা, গুচি ২০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৫০ টাকা, কই ৬০০ টাকা, বাইন ১ হাজার টাকা, আইড় ৪৫০ টাকা, বোয়ার ১ হাজার ৮০০ টাকা, বাসপাতা ১ হাজার টাকা, চিংড়ি ৪৮০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতিহালি সাদা ডিম ৩৪ টাকা ও লাল ৩৬ টাকাসহ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হয়েছে মাংস।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.